নিরাপত্তাহীনতায় ব্যাংক, ব্যাহত সেবা

বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাংলাদেশের কোটিপতি,

শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদিন পর গতকাল ব্যাংক খুললেও নিরাপত্তার কারণে আর্থিক লেনদেনসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। একই কারণে ব্যাংকগুলো তাদের শাখা বা এটিএম বুথে নগদ টাকা পাঠাতে পারেনি, লেনদেনও অনেক কমেছে।

সোমবার রাতে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার খবরের মধ্যে তারা নিজেদের নিরাপত্তার আশঙ্কায় কর্ম বিরতি পালন করছে। ফলে গতকাল ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে যেসব এলাকায় ঝুঁকি বেশি, সেসব এলাকায় অনেক ব্যাংক সীমিত আকারে কার্যক্রম চালিয়েছে, বুথ বন্ধ করে দিয়েছে।

তারা আরও বলেন, যেসব এলাকায় ঝুঁকি বেশি সেসব এলাকার আউটলেট ও এটিএম বুথ বন্ধ রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসময়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলায় সোমবার রাতেও সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এসময় সেনা সদস্যদের সীমিত উপস্থিতি ছাড়া রাজধানীর রাস্তাঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ছিল নিরাপত্তাহীন। ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে সারাদেশের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, আমরা গতকাল সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেছি।

তিনি বলেন, 'পুলিশি সেবা না থাকায় যেখানে নিরাপত্তা কম বা পরিস্থিতি অস্বস্তিকর বলে মনে হয়েছে, সেখানে আমরা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।'

'নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় সারা দেশে ১৮টি শাখার মধ্যে মাত্র চারটি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছি। এর মধ্যে তিনটি ঢাকায় এবং অন্যটি চট্টগ্রামে,' বলেন তিনি।

এছাড়া খুলনা, সিলেট ও বগুড়ায় ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে আমাদের গ্রাহক ও সহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

মতিঝিলে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মূল প্রবেশপথ বন্ধ থাকলেও কিছু শাখার পকেট গেট খোলা ছিল।

জানতেন চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শের আলোকে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন শাখার ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী খুলছে।

তিনি আরও বলেন, 'গতকাল সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা কমে আসবে। তখন আরও শাখা খোলা হবে।'

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা গতকাল সব শাখা খুলতে পারেনি।

তিনি বলেন, 'যেসব এলাকায় সহিংসতা ও ডাকাতির আশঙ্কা রয়েছে, সেসব এলাকায় আমরা শাখা-প্রশাখা বন্ধ করে রেখেছি। গ্রাহকের উপস্থিতিও ছিল খুবই কম।'

ঢাকার ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা গোলাম মাওলা বলেন, 'গত কয়েকদিনের সহিংসতায় এটিএম বুথ বন্ধ থাকায় টাকা তুলতে পারছি না। অথচ আমার কাছে কোনো টাকা নেই।'

তিনি বলেন, 'আশপাশের এলাকার অধিকাংশ বুথ বন্ধ, তাই গতকালও টাকা তুলতে পারিনি।'

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তারা সীমিত পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

তিনি বলেন, 'যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা অফিসে আসেননি।'

তিনি বলেন, মাদারীপুরে তাদের একটি শাখা থেকে দুর্বৃত্তরা এটিএম ভাঙচুর ও চুরি করেছে। তবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকরা কোনো সেবা না নেওয়ায় রাজধানীতে গ্রাহকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য কম।

মতিঝিলের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অস্থিতিশীলতার কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কম গ্রাহক সেবা নিতে আসছেন।

'কিন্তু গতকাল গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল, কারণ নিরাপত্তা কর্মীদের অনুপস্থিতিতে উদ্বেগ বেশি ছিল,' বলেন তিনি।

ব্যাংকের শাখায় কর্মচারীও কম ছিল এবং তাদের বেশিরভাগই আধাবেলা কাজ করেছে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের নাসের এজাজ বিজয় বলেন, সোমবার অনেক দেরিতে ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্ত আসায় গতকাল অনেক গ্রাহক ব্যাংকিং সেবা নেননি।

সাম্প্রতিক অস্থিরতায় এক কর্মীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'এটি আমাদের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তাই আমাদের গ্রাহক ও সহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।'

নাসের এজাজ বিজয় বলেন, 'যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে এবং আমরা যদি নিরাপদ বোধ করি তাহলে সব শাখা চালু করব।'

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

16h ago