প্রচলিত ব্যাংকগুলো কি ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে পারে?

ডিজিটাল ব্যাংকগুলো কোনো প্রচলিত শাখা ছাড়াই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও অনলাইন চ্যানেলে গ্রাহকদের আর্থিক পরিষেবা দিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ব্যাংকগুলো ফিনটেক স্টার্ট-আপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। এদের কম খরচে পরিষেবা দেওয়ার প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে।
ডিজিটাল ব্যাংক
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য ৫২টি আবেদন পেয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ আবেদন এসেছে প্রচলিত ৬২টি ব্যাংক থেকে। যদিও প্রচলিত ব্যাংকগুলো তাদের বর্তমান লাইসেন্সে একই সেবা দিতে পারবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে—ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) সরবরাহকারী, মোবাইল অপারেটর, আইটি ফার্ম, স্টার্ট-আপ, ফার্মাসিউটিক্যালস ও সিমেন্ট প্রস্তুতকারকসহ প্রায় ৫০০ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে।

ডিজিটাল ব্যাংকগুলো কোনো প্রচলিত শাখা ছাড়াই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও অনলাইন চ্যানেলে গ্রাহকদের আর্থিক পরিষেবা দিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ব্যাংকগুলো ফিনটেক স্টার্ট-আপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। এদের কম খরচে পরিষেবা দেওয়ার প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকগুলো কোনো ফিজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু এবং বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্য মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৫২টি আবেদন জমা পড়েছে। এই সংখ্যা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।'

ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদনের সময়সীমা ১৬ দিন বাড়ানোর পর তা গত ১৭ আগস্ট শেষ হয়।

মেজবাউল হক আরও বলেন, আবেদনগুলো এখন যাচাই-বাছাই করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের "ফিট অ্যান্ড প্রপার" মানদণ্ড পূরণ করা আবেদনগুলো অনুমোদনের জন্য বোর্ডের কাছে পাঠানো হবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে লাইসেন্সের জন্য লেটার অব ইনটেন্ট ইস্যু করবে বলে জানান তিনি।

তবে কতগুলো ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স ইস্যু করা হবে তা তিনি জানাননি।

এর মধ্যে একটি আবেদন এসেছে ১০ বেসরকারি ব্যাংকের কনসোর্টিয়াম থেকে 'ডিজি১০ ব্যাংক' নামে।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে—সিটি, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, মিডল্যান্ড, ডাচ-বাংলা, প্রাইম, ট্রাস্ট ও পূবালী।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক 'রকেট' ও ট্রাস্ট ব্যাংক 'টিএপি'র মাধ্যমে মোবাইলে আর্থিক পরিষেবা দিয়ে আসছে।

অপর আবেদন এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৩ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কনসোর্টিয়াম থেকে। সেগুলো হলো—সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক 'ইউপে'র মাধ্যমে মোবাইলে আর্থিক সেবা দিয়ে আসছে। 'ইউপে ডিজিটাল ব্যাংক'র জন্য জেনেক্স ইনফোসিস, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও আরামিটকে নিয়ে একটি কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।

বেসিসের ফিনটেক ও ডিজিটাল পেমেন্টবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম ফাহিম মাশরুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো।'

তার মতে, 'খুব কম সংখ্যক ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সেবা দিয়ে থাকে। যদি বড় বড় কর্পোরেশন ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল ব্যাংকের মালিক হয় তবে এই ব্যবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।'

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, 'প্রচলিত ব্যাংকগুলো ফিনটেকের সহায়তা ছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে ভালো করতে পারবে না।'

ব্র্যাক ব্যাংকের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা 'বিকাশ'র প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগ করছে। এর পরিচালনা পর্ষদে আছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট গ্রুপ, মানি ইন মোশন এলএলসি ও সফটব্যাংক ভিশন ফান্ড।

গতকাল বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শেয়ারহোল্ডারদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি বিশ্বমানের ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে তাদের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও ১২ বছরের সম্পৃক্ততা আমাদেরকে ডিজিটাল ব্যাংকের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে গত সাড়ে ৩ বছর ধরে বিকাশ দেশের প্রথম ডিজিটাল ঋণ দিয়ে আসছে। কামাল কাদির জানান, এটি ডিজিটাল সঞ্চয় স্কিমও চালু করেছে।

তার ভাষ্য, 'আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে সবার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ, জামানতবিহীন ঋণের খরচ কমাতে ও গ্রাহকদের ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে আমাদের বিদ্যমান ডিজিটাল কাঠামো ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করা যেতে পারে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে আমরা অবদান রাখতে চাই।'

'বিকাশ'র প্রতিদ্বন্দ্বী 'নগদ'ও ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের চেষ্টা করছে।

'নগদ'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ২০২০ সালে ডিজিটাল ব্যাংকের ধারণাটি সামনে এনেছি। শুধুমাত্র ডিজিটাল ব্যাংকই এখন সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এজেন্ডাকে পরিপূর্ণ করতে পারে।'

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Should existing banks get digital bank licence? লিংকে ক্লিক করুন

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Prof Muhammad Yunus for a road map to reforms and the next general election.

5h ago