ব্যাংক আইন সংশোধনে লাভ কার

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে পরিচালকরা লাভবান হবেন, ব্যাংক খাতে তাদের আধিপত্য আরও বাড়বে, নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে না এবং খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আহসান এইচ মনসুর, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য,

জাতীয় সংসদে গত ২১ জুন 'ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল ২০২৩' পাস হয়েছে। যেখানে ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ বছর করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে, এবারই প্রথম নয় আগেও কয়েকবার ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ নিয়ে ব্যাংক আইনি সংশোধন করা হয়েছিল।

এর আগে, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনে বলা হয়েছিল, একজন পরিচালক টানা ৬ বছর পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। তবে, ১৯৯৫ সালে এই বিধানটি প্রত্যাহার করা হয়। যার অর্থ একজন পরিচালক কত বছর ব্যাংক বোর্ডের পদে থাকতে পারবেন সে বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না।

১৯৯৭ সালে সরকার আবার আইন সংশোধন করে। যেখানে ব্যাংক পরিচালকদের ৬ বছরের জন্য পদে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু, ২০০৩ সালে এই বিধানটি বাতিল করা হয়।

২০১৩ সালে আবার আইনটি সংশোধন করা হয় এবং একজন পরিচালককে ৬ বছরের জন্য পদে থাকার বিধান রাখা হয়। কিন্তু, ২০১৮ সালে মেয়াদ বাড়িয়ে ৯ বছর করা হয়। আর সর্বশেষ চলতি বছর সেই মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো- পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর করায় কারা লাভবান হবেন বা ব্যাংক খাতের আদৌ কোনো লাভ হবে কি না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে পরিচালকরা লাভবান হবেন, ব্যাংক খাতে তাদের আধিপত্য বাড়বে, নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে না এবং খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের উদ্যোগের ফলে আগামীতে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হয়ে আসবে। একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে নতুন নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, এই সংশোধনীর ফলে দেশের ব্যাংকিং খাত নতুন নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হবে।'

তিনি প্রশ্ন করেন, 'একজন পরিচালক যদি টানা ১২ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তাহলে ব্যাংকিং খাতে নতুন নেতৃত্ব কীভাবে তৈরি হবে?'

পরিচালকদের সুবিধা দিতেই ব্যংক আইনে সংশোধন আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, 'দেশে কোনো গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নেই। তাই, কোনো বিবেচনা ছাড়াই বিলটি পাস করা হয়েছে। আর জবাবদিহিতার অভাবটি জাতীয় নির্বাচনের ঠিক নেতিবাচকভাবে উন্মোচিত হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া খুবই বিরল।'

তিনি আরও বলেন, 'পরিচালকদের ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার অনুমতি দিলে ব্যাংকগুলোর সুশাসন দুর্বল হবে এবং খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। সরকারের উচিত ছিল আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা, কিন্তু তারা পরিচালকদের সেবা করেছে।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'এই নিয়ম চালু হলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ওপর পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে।'

Comments