নীতিমালা শিথিল করে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব না

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

করপোরেট সুশাসনের অভাব ও বাণিজ্য খাতে চলমান মন্দার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মোট অনাদায়ী ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের অনুপাত ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, খেলাপি ঋণ পরিশোধে সহনশীলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল করার শিথিল নীতি নন-পারফর্মিং ঋণের (এনপিএল) বাড়তে থাকা ধারার ওপর রাশ টেনে ধরতে পারেনি।

তবে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে এনপিএলের পরিমাণ ১০ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ পুনঃতফসিল করার নীতি আরও শিথিল করেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

যেসব ঋণ খেলাপির ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১ বছরের বেশি, জুলাই মাসে তাদের বিশেষ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগের ১০ থেকে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে মোট এনপিএলের ২ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট করলেই তারা পুনঃতফসিল সুবিধা পাচ্ছেন।

একইভাবে, কার্যকরী মূলধন ও ডিমান্ড ঋণের ক্ষেত্রেও ডাউন পেমেন্টের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশে নামানো হয়, যেটি আগে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ ছিল।

২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পেমেন্ট করলেই 'খেলাপি' হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার সুযোগ পান ঋণগ্রহীতারা। এর আগে এই হার ৭৫ শতাংশ ছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও চেম্বার প্রায়ই ঋণের শ্রেণীভুক্তকরণ নীতিমালা শিথিলের দাবি জানিয়েছে।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের শিথিল নীতিমালা অনুসরণ করেছে, যা ২০২২ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এনপিএলের পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়ে গত বছর ৬১ হাজার ১৬৯ টাকা হয়েছে।

৪২ বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা, যেটি ১ বছর আগের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। ৯ বিদেশি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৭৮৫ কোটি থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৪৮ কোটি হয়েছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা (আইএমএফ) জানিয়েছে, নন-পারফর্মিং ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকলে তা প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

নন-পারফর্মিং ঋণ সমস্যা নিরসনে একটি সামগ্রিক এবং সময়সীমাবদ্ধ কৌশল কাজে লাগালে তা কার্যকর হতে পারে বলে সংস্থাটি জানায়।

আইএমএফের একটি নথি অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের তদারকির জন্য ব্যাংক-নির্দিষ্ট এনপিএল রেজুলেশন, মূলধন পুনরুদ্ধার কৌশলের উন্নয়ন, কার্যকর নিরীক্ষা ও বাস্তবায়ন অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে স্মারক চুক্তি (এমওইউ) সাক্ষর করা হবে, যাতে তাদের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া নিশ্চিত হয়।

নথিতে বলা হয়েছে, এসব স্মারকের মাধ্যমে ২০২৬ সাল নাগাদ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৫ শতাংশের নিচে গড় এনপিএল অনুপাতকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

(সংক্ষেপিত, ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Relaxed rules can't tame default loans)

Comments

The Daily Star  | English

4 years could be maximum one can go before election: Yunus tells Al Jazeera

Says govt's intention is to hold election as early as possible

1h ago