‘ফটোগ্রাফির জন্য বাংলাদেশ স্বপ্নের দেশ’

ছবি: জাকিরুল মাজেদ কনক

'ফটোগ্রাফির জন্য বাংলাদেশ স্বপ্নের দেশ। একজন ফটোগ্রাফার যে ছবিই চান, তা এখানে পাওয়া সম্ভব। এ দেশের প্রকৃতি, ঋতু বৈচিত্র্য, নদী-সমুদ্র, পাহাড়, বন, বিস্তৃত ধান খেত, নানান ধরন আর পেশার মানুষ— যা চান তার প্রায় সবই আছে।'

আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি দিবসে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন আলোকচিত্রী ও বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির (বিপিএস) সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল মাজেদ কনক।

তার মতে, বাংলাদেশে ফটোগ্রাফির জন্য সাবজেক্টের যেমন অভাব নেই, তেমনি অনুমতির ঝামেলাও পোহাতে হয় না। ল্যান্ডস্কেপ, পোট্রেট, ন্যাচার, ফ্যাশান সব ধরনের ছবি এখানে তোলা যায়। শুধু আলোকচিত্রীকে তার ছবিটা খুঁজে নিতে হবে।

জাকিরুল মাজেদ কনক। ছবি: সংগৃহীত

কনক বলেন, 'একটি সিনেমা বা নাটকে গল্প বলার জন্য বেশ কিছুটা সময় থাকে। কিন্তু, ফটোগ্রাফি হচ্ছে একটি মাত্র মুহূর্তে গল্পটা বলা। একটি ছবি অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে বলা গল্পের চেয়েও শক্তিশালী বার্তা দিতে পারে।'

'একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে আমার সব সময় মনে হয়, পৃথিবীকে নতুন কিছু দিতে হবে। আগে যা হয়ে গেছে, আবার সেই একই জিনিসের কপি করার মানে হয় না। একটি সাবজেক্টকে অনেকভাবে দেখার সুযোগ আছে। নতুন কিছু করার সেই চেষ্টাই সবসময় করতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

ছবি: জাকিরুল মাজেদ কনক

পৃথিবীর বিখ্যাত সব আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের অংশগ্রহণ ও পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'সর্বশেষ হিপায় কালার বিভাগে তৃতীয় হয়েছেন রাহাত বিন মোস্তাফিজ এবং বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন তুর্যয় চৌধুরী। বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিয়মিতই অংশ নিচ্ছেন এবং পুরস্কারও পাচ্ছেন। ওয়ার্ল্ড প্রেস, পুলিৎজার, সিয়েনা, আশাহি সিম্বুনসহ এমন কোনো বড় আসর বাকি নেই, যেখান থেকে বাংলাদেশিরা পুরস্কৃত হননি।'

দুবাইয়ে আয়োজিত হামদান বিন মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড, যা হিপা নামে সর্বাধিক পরিচিত, পুরস্কার অংকের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড বিজয়ী পুরস্কার হিসেবে পান ১ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকারও বেশি। এ ছাড়াও, বিভাগ অনুযায়ী বিজয়ীরা বিভিন্ন অংকের অর্থ পুরস্কার পেয়ে থাকেন।

ছবি: জাকিরুল মাজেদ কনক

কনক বলেন, 'আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রতিযোগিতার ফলাফল দেখেন, বাংলাদেশের কেউ না কেউ বিজয়ীর তালিকায় আছে। ছোট একটি দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ পুরস্কার আসে, তা সত্যিই অকল্পনীয়। পুরো বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন এ দেশের আলোকচিত্রীরা। যদিও সরকারের কাছে তারা অবহেলিতই রয়ে গেছেন। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আমরা পাই না।'

তিনি আরও বলেন, 'শুধু প্রতিযোগী হিসেবে নয়, বিচারক হিসেবেও আমাদের দেশের জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রীরা দায়িত্ব পালন করছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়।'

ছবি: জাকিরুল মাজেদ কনক

দেশের আলোকচিত্র ও আলোকচিত্রীদের জন্য বিপিএসের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউটকে (বিপিআই) নতুন করে উজ্জীবিত করা হয়েছে। আলোকচিত্রাচার্য মনজুরুল আলম বেগের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানে আলোকচিত্র বিষয়ক কোর্স করানো হবে। মাঝে দীর্ঘ দিন এর কার্যক্রম ছিল না। কিন্তু, এখন আলোকচিত্রীদের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করছি। জেলাগুলোতে থাকা ফটোগ্রাফি ক্লাবগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের কার্যক্রম বাড়াতেও আমাদের সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বিপিএস সদস্যসের প্রয়োজনে মানবিক সহায়তায় আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করি।'

দেশের ফটোগ্রাফির জন্য পাঠশালা অনেক বড় অবদান রাখছে উল্লেখ করে কনক বলেন, 'এমন আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশে থাকলে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কোর্স করার খরচ কম হলে চিত্র বদলে যাবে। আরও অনেক বেশি ছেলে-মেয়ে আলোকচিত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে পারবে।'

ছবি: জাকিরুল মাজেদ কনক

তরুণদের জন্য ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেওয়া কঠিন বলে মনে করেন কনক। 'অভিভাবকরা এখনো মানতে চান না যে ফটোগ্রাফিও একটি পেশা হতে পারে। একাগ্রতা ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে এখান থেকে অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে বেশি আয়ও করা সম্ভব। অনেকেই আলোকচিত্রী হতে চান, শুরুও করেন। কিন্তু, পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে কিংবা আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকায় শেষ পর্যন্ত আর টিকে থাকতে পারেননি', বলেন তিনি।

নতুনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'যেকোনো কাজেই গুরু ছাড়া বড় হওয়া যায় না। আমি মনে করি, নতুন যারা ফটোগ্রাফিটাকে মন থেকেই করতে চায়, তাদের উচিত একজন জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রীর সঙ্গে থেকে কাজ শেখা। অনলাইন মাধ্যমগুলো থেকে কিছু বিষয় শেখা হয়তো সম্ভব, কিন্তু বাস্তব জ্ঞান পেতে বাস্তব শিক্ষকের বিকল্প নেই। এভাবে এগিয়ে গেলে তাদের চলার পথ যেমন সহজ হবে, তেমনি অনেক অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান তারা অর্জন করতে পারবে।'

ছবি: জাকিরুল মাজেদ কনক

'অন্যান্য সবকিছুর মতোই ফটোগ্রাফিরও কিছু গ্রামার আছে, যা ভালোভাবে শেখা দরকার,' যোগ করেন তিনি।

দেশের ফটোগ্রাফারদের ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই প্রয়োজন উল্লেখ করে কনক বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে কেউ যদি কোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়, তাহলে তাকে সাধুবাদ জানানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি অন্যরাও যেন অগ্রগতির ওই পথে হাঁটতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করাও হবে বিজয়ীর কাজ। তাহলে সবাই মিলে আরও বেশি গতিতে, বেশি পথ পাড়ি দিতে পারব। এতে দিন শেষে লাভবান হবে দেশ, লাভবান হবে এ দেশের ফটোগ্রাফি।'

ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি ডে উপলক্ষ্যে ফরিদপুর ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (এফপিএস) আয়োজিত ওয়ার্কশপের অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে জাকিরুল মাজেদ কনক। ছবি: এফপিএসের সৌজন্যে

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago