৫০ পেরিয়ে বাংলাদেশের আলোকচিত্র
বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ৫০ বছরের ফিরিস্তি লিখতে গেলে শুরু করতে হবে তারও একটু আগে থেকে। বায়ান্নর সেই উত্তাল দিনগুলোর চিত্র ধারণ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন আলোকচিত্রী আমানুল হক ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভাষাসংগ্রামের রক্তাক্ত ঘটনাকে অস্বীকার করতে চেয়েছিল। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় একটিমাত্র ছবির কারণে।
পুলিশের গুলিতে নিহত রফিক উদ্দীনের মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। গোপন খবরের ভিত্তিতে আমানুল হক মর্গে ঢুকে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত ছবি। ছবিটি রক্ষা করতে তাকে ভারতে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। আমানুলের তোলা ছবিটি এভাবেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান নিয়াজীর আত্মসমর্পণের ছবিটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আলোকচিত্র হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। চিত্রসাংবাদিক আফতাব আহমেদের ধরে রাখা বিজয়ের মুহূর্তটি ইতিহাসের আধার হয়ে আছে।
স্বাধীনের পর আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে আলোকচিত্রই একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে দিল্লিতে এশিয়ান ফেয়ারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের জন্য একটি স্টল বরাদ্দ করেন। এ উপলক্ষে ১১ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তার স্নেহভাজন ১৪ জন ফটোসাংবাদিককে সুগন্ধায় ডাকেন। বলেন, 'দেশকে উপস্থাপনের মতো আমাদের তো কিছু নেই। তোমাদের তোলা গণ-আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো দিয়ে একটা প্রদর্শনী করলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যায়।'
সেদিন বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ আর পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় 'বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও একাডেমি'। দিন দশেক পর এশিয়ান ফেয়ারে ফটোসাংবাদিকদের ছবিতে প্রথম মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
এ দেশে ফটোগ্রাফির শিক্ষাচর্চা শুরু হয় পথিকৃৎ আলোকচিত্রশিল্পী গোলাম কাসেম ড্যাডির হাত ধরে। আলোকচিত্রীদের অভিভাবক হিসেবে তাকে 'ড্যাডি' ডাকা হয়। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকায় ট্রপিক্যাল ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬০ সালে আলোকচিত্রাচার্য মনজুর আলম বেগ প্রতিষ্ঠা করেন বেগার্ট ইন্সটিটিউট। ১৯৬৪ সালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় সমাজকল্যাণ দপ্তরের অধীনে চালু হয় ফটোগ্রাফিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিপিএসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক ইন্সটিটিউট। ১৯৯৮ সালে দৃক পিকচার লাইব্রেরির অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে পাঠশালা—দ্য সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি। পাঠশালা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি ইনস্টিটিউটি। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কাউন্টার ফটো। এছাড়া এখন প্রিজম, ফটোফি, চঞ্চল মাহমুদ স্কুল অব ফটোগ্রাফিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
ফটোগ্রাফির সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয় দেশভাগের পর। ১৯৪৮ সালে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট পাকিস্তান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। কয়েক বছর পর গোলাম কাসেম ড্যাডি ও বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ইস্ট পাকিস্তান ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু সংগঠন ২টি দীর্ঘস্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। ফলে ১৯৬২ সালের ১২ আগস্ট গোলাম কাসেম ড্যাডি প্রতিষ্ঠা করেন ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশে ফটোগ্রাফির সাংগঠনিকচর্চা গতিশীল হতে শুরু করে। এরপর মনজুর আলম বেগের নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের ৩০ মে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস)। বিপিএসের মাধ্যমে এ দেশে ফটোগ্রাফির জোয়ার শুরু হয়। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে সিনেসিক, ম্যাপ ও আলোকসহ কয়েকটি সংগঠন গড়ে ওঠে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে পাঠশালার আলোকচিত্র সংগঠন 'মুক্তচোখ'।
ইতিহাস বলে, ঢাকা আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার সময়ে চিত্রকলার বিভিন্ন শাখার সঙ্গে ফটোগ্রাফি বিভাগও চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষক না পাওয়ায় সে সময় এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এরপর ষাটের দশকের শুরুতে আর্ট কলেজে ফটোগ্রাফির একটা পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ফটোগ্রাফি পড়ানোর জন্য শিল্পী মুস্তফা মনোয়ারকে আর্ট কলেজে নিয়ে আসেন। ক্যামেরা, লাইটিং, এনলার্জারসহ ডার্করুম সরঞ্জাম কেনা হলো। কিন্তু কোথায় যেন ছেদ পড়ল! অনেক দিন অপেক্ষা করে মুস্তফা মনোয়ার চলে গেলেন টেলিভিশনে। ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে আর্ট কলেজে আসলে ফটোগ্রাফি বিভাগ প্রতিষ্ঠার আলোচনাটি আবারো জোরালো হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। ফলে চারুকলায় ফটোগ্রাফি আর জায়গা করে নিতে পারল না।
তাই বলে বাংলাদেশে ফটোগ্রাফির পথচলা থেমে থাকেনি। অনেকটা ব্যক্তি-উদ্যোগেই এগিয়ে চলেছে ফটোগ্রাফিচর্চা। বর্তমানে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে অনেক চোখ এখন এ দেশের আলোকচিত্রীদের কাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সফলতার পেছনে রয়েছে কিছু মানুষের নিরলস প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের আলোকচিত্রবিদ্যায় অনন্য অবদান রেখে যিনি প্রবাদপুরুষ হয়ে আছেন তিনি গোলাম কাসেম ড্যাডি। আরেক ধীমান মানুষ হলেন মনজুর আলম বেগ। বাংলাদেশের আলোকচিত্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করার জন্য যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি ড. শহিদুল আলম। আমানুল হক, নাইবউদ্দীন আহমদ, ড. নওয়াজেশ আহমদ, আনোয়ার হোসেন সৃষ্টি করে গেছেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। নাসির আলী মামুন তৈরি করেছেন প্রতিকৃতি আলোকচিত্রের ধারা।
পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের আলোকচিত্রকে যারা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন- ইউসুফ মোহাম্মদ প্যাটেল, আজমল হক, কফিল উদ্দীন আহমেদ, বিজন সরকার, হাজি আবু তালেব, সৈয়দ আনিসুল হোসেন, মৃণাল সরকার, ডা. আনসার উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ খসরু, এম হারিস উদ্দিন, আজীজুর রহমান, খান মোহাম্মদ আমীর, এস এস বড়ুয়া, কাজী মিজানুর রহমান, শফিকুল ইসলাম স্বপন, স্বপন সাহা, দেবব্রত চৌধুরী, নাফিস আহমেদ নাদভী, মোহাম্মদ আলী সেলিম, কাশিনাথ নন্দী, হাসান সাইফুদ্দীন চন্দন, ডা. রশিদ-উন-নবী শুভ্র, এবিএম আখতারুজ্জামান, খালিদ মাহমুদ মিঠু, চঞ্চল মাহমুদ, সেলিম নেওয়াজ ভূঞা, শেহজাদ নূরানী, মাহমুদুর রহমান, মো. মঈন উদ্দীন, সৈয়দ লতিফ হোসেন, আক্কাস মাহমুদ, শিহাবউদ্দীন, বশীর আহমেদ সুজন, ইমতিয়াজ আলম বেগ, পল ডেভিড বারিকদার, খালেদ হাসান, খন্দকার তানভীর মুরাদ, ইউসুফ তুষারসহ আরও অনেকে।
সাইদা খানমকে বলা হয় নারী আলোকচিত্রীদের পথিকৃৎ। তার পর আসেন সাজেদা খানম, সুফিয়া বেগম, ডলি আনোয়ার, দীল আফরোজ পারভীন, সিতারা ফেরদৌস, মাহবুবা খান, শিরীন সুলতানা, মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, শায়লা হক মিতা, নূরজাহান চাকলাদার, রওশন আরা ঝুনু, ইসমাত জাহান, ফারজানা খান গোধুলী, সামিরা হক, স্নিগ্ধা জামান, সৈয়দা ফারহানা, মাসুমা পিয়া, মোমেনা জলিল, কাকলী প্রধান, জান্নাতুল মাওয়া, সাবিনা ইয়াসমীন, জয়িতা রায়, মম মুস্তফা, জয়া করীম, হাবিবা নওরোজ, ফাতেমা তুজ জোহরা, ফারহানা ফারাহ প্রমুখ।
পৃথিবীর এমন কোনো প্রতিযোগিতা নেই, যেখানে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা জয়ী হননি। ২০১৮ সালে পুলিৎজার জেতেন রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ পনির হোসেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ১০ জন আলোকচিত্রী ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার জিতেছেন। ওয়ার্ল্ড প্রেস বিজয়ীরা হলেন- শফিকুল আলম কিরণ, শোয়েব ফারুকী, জিএমবি আকাশ, এন্ড্রু বিরাজ, তাসলিমা আখতার, রাহুল তালুকদার, সরকার প্রতীক, মো. মাসফিকুর আখতার সোহান, কেএম আসাদ ও ইসমাইল ফেরদৌস। ওয়ার্ল্ড প্রেসের আরেকটি সম্মানসূচক গ্র্যান্ড জুপ মাস্টার ক্লাস জিতেন জিএমবি আকাশ, মুনেম ওয়াসিফ, এন্ড্রু বিরাজ, সাইফুল হক অমি, সরকার প্রতীক, শামসুল আলম হেলাল, সাদমান শহীদ, আশফিকা রহমান, শাহারিয়া শারমীন ও সালমা আবেদীন পৃথি। বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের মুকুটে যুক্ত হয়েছে ইউজিন স্মিথ ফান্ড, মাদার জোনস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অল রোডস, পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার এওয়ার্ড, হিপা, টাইম ম্যাগাজিন পারসন অব দ্য ইয়ারের মতো সম্মানসূচক পালক।
প্রথম এশিয়ান হিসেবে ২০০৩ সালে ড. শহিদুল আলম ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর জুরি চেয়ার হন। এর আগে তিনি ১৯৯৪, ১৯৯৫ ও ১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার জুরি সদস্য ছিলেন। এরপর ওয়ার্ল্ড প্রেসের জুরি সদস্য হয়েছেন আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ ও মুনেম ওয়াসিফ। ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেসের এশিয়া অঞ্চলের জুরি চেয়ার হন তানজিম ওয়াহাব। এ বছর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের এশিয়া অঞ্চলের সহ-আয়োজক হিসেবে যুক্ত হয়েছে দৃক। এশিয়া মহাদেশের এত এত দেশ থাকতে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের মনোনয়ন পাওয়া কম গৌরবের ব্যাপার নয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো আলোকচিত্রী স্বাধীনতা পদক পাননি। একুশে পদক পেয়েছেন মো. কামরুজ্জামান, আফতাব আহমেদ, মনজুর আলম বেগ, মোহাম্মদ আলম, আমানুল হক, গোলাম মুস্তফা, সাইদা খানম ও পাভেল রহমান। বাংলাদেশ শিল্পকলা পদক পেয়েছেন শহিদুল আলম, গোলাম মুস্তফা, নাসির আলী মামুন, এমএ তাহের ও শফিকুল ইসলাম স্বপন।
সাম্প্রতিক সময়ে ফটোগ্রাফির ইতিহাস নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। শহিদুল আলম, অনুপম হায়াত, রাফিউল ইসলাম, নাঈম মোহায়মেন ফটোগ্রাফি গবেষণায় অগ্রগণ্য। এই নিবন্ধকারের সম্পাদিত ড্যাডিসমগ্র'র মতো উল্লেখযোগ্য স্মারক প্রকাশনা বাংলাদেশ থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তানজীম ওয়াহাব, মুনেম ওয়াসিফ সম্পাদিত 'কামরা' ও সাইফুল হক অমি সম্পাদিত 'কাউন্টার ফটো' ফটোগ্রাফিবিষয়ক উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা। ফটোগ্রাফি নিয়ে পত্র-পত্রিকা সীমিত। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির মাসিক মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় বিপিএস নিউজ লেটার। পরবর্তী সময়ে এর নাম বদলে হয় 'মাসিক ফটোগ্রাফি'। সাম্প্রতিক সময়ে ফটোগ্রাফি নিয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন নাসির আলী মামুন, মো. রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর সেলিম, সুদীপ্ত সালাম, সুমন ইউসুফ ও মো. শাহারিয়ার খান শিহাব প্রমুখ।
আজকের শিল্পবিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি তার নেপথ্য ভূমিকা দৃক ও পাঠশালার। প্রতিষ্ঠার ১১ বছরের মাথায় ২০০০ সালে দৃক প্রথম আন্তর্জাতিক ছবিমেলার আয়োজন করে। বলতে দ্বিধা নেই, ছবিমেলা এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব। অপরদিকে পাঠশালার উত্তরণকে বাংলাদেশের 'আলোকচিত্রিক রেনেসাঁ' বলা যায়। পাঠশালা শুধুমাত্র শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না; জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি চর্চার মাঝখানের দূরত্বও ঘুচিয়ে দিতে শুরু করল। আগে এ দেশে স্যালোন বা আর্ট ফটোগ্রাফির চর্চা হতো। কিন্তু ছবি দিয়ে যে সমাজজীবনের গল্প বলা যায় এই ধারণা আসে পাঠশালা প্রতিষ্ঠার পর থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ফটোগ্রাফি বিভাগ চালু করার দাবি দীর্ঘদিনের। ভিজ্যুয়াল দুনিয়ায় এটা এখন সময়েরও দাবি। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়ে গেল, সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি নিয়ে এত এত ঘটনা ঘটে গেল, কিন্তু দেশের মাটিতে তাদের কোনো মূল্যায়ন হলো না। গোলাম কাসেম ড্যাডি, নাইবউদ্দীন আহমেদ, ড. নওয়াজেশ আহমেদ, রশীদ তালুকদার আর আনোয়ার হোসেনের মতো আলোকচিত্রীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে না পারাও এক ধরনের সীমাবদ্ধতা। আলোকচিত্রীদের জয় হোক।
Comments