মার্চে রাজস্ব আদায়ের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি হলেও খুশির কারণ নেই

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর আদায়ের ধীরগতির কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এটি রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

যদিও মার্চে মাসিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ ছিল। তবে চলমান অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে এখন সরকার নির্ধারিত বার্ষিক কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি আইএমএফ নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণে কঠিন সংকটের মুখে পড়বে।

রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে—চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে দুই দশমিক ৭৬ শতাংশ।

রাষ্ট্রের মোট রাজস্বের ৮৬ শতাংশ আদায় করে রাজস্ব বোর্ড। গত মার্চ পর্যন্ত সংস্থাটি আদায় করেছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। সরকারের সংশোধিত লক্ষ্য চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আইএমএফ বাংলাদেশকে চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে চার লাখ ৫৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু, রাজস্ব আদায় এর চেয়েও অনেক কম।

আইএমএফ'র লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে রাজস্ব বোর্ডকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বা প্রতি মাসে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে—সর্বশেষ পরিদর্শনকালে আইএমএফ'র মিশন আগামী জুনের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত সাত দশমিক চার শতাংশে উন্নীত করতে রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে।

কয়েকটি খাতে দেওয়া কর ছাড়ের নীতি বাতিল করে আগামী অর্থবছরের জন্য অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় চেয়েছে আইএমএফ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাত্র দুই দশমিক ৭৬ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক। যদি ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধার করতে না পারি তবে আইএমএফ-নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের উপায় থাকবে না।'

'এই হারে ১৫ শতাংশে পৌঁছানোর সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে চলতি অর্থবছরে আমরা ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারব কিনা তাও নিশ্চিত না।'

তিনি মনে করেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধির গতিপথের ওপর ভিত্তি করে সরকার চাইলেও রাজস্ব ঘাটতির কারণে খরচ বাড়ানোর পরিস্থিতিতে নাও থাকতে পারে।

তার মতে, 'সেদিক থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ও সামগ্রিক প্রক্ষেপণ আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে।'

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব আদায়ের কথা উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত মাসের শুরুতে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে মোট রাজস্ব সংগ্রহ সাড়ে ৫৫ শতাংশ বাড়াতে হবে।

রাজস্ব আদায়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে ঘাটতি এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে, 'এটি আসলে অনেক সম্ভাবনাময়।'

এ ছাড়া, সরকার আগামী অর্থবছরে কর প্রশাসনের জন্য চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে সাত দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।

রাজস্ব বোর্ডের প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে—মন্দা কাটিয়ে উঠলেও বাংলাদেশের আমদানি এখনো কম থাকায় চলতি বছরের জুলাই থেকে মার্চে শুল্ক রাজস্ব আদায় শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারিতে সামগ্রিক আমদানি তিন দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে ৩৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার হয়।

কর রাজস্বের সবচেয়ে বড় উৎস মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। এটি রাজস্ব বোর্ডের মোট কর আদায়ের ৩৮ শতাংশ। গত মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই দশমিক শূন্য নয় শতাংশ বেড়ে এক লাখ ১৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা হয়েছে।

একই সময়ে আয় ও ভ্রমণ কর পাঁচ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ১৬ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা হয়েছে। এটি আগের বছরে ছিল ৮২ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা।

'বড় ধরনের রাজস্ব সংস্কার ছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা যাবে না' বলে মনে করেন আশিকুর রহমান।

'এবারের বাজেটের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সুদ পরিশোধের ৮৫ শতাংশই যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধে। সুদ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে পরিচালন বাজেটের খরচ কমে যাচ্ছে।'

'রাজস্ব প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ছাড়া এই রাজস্ব সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নেই' জানিয়ে তিনি বলেন, 'তবে এটি শুধু লক্ষ্য নির্ধারণের বিষয় নয়; সত্যিকারের সংস্কার দরকার।'

কর প্রশাসনকে নীতি বিভাগ থেকে আলাদা করার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তবে তা শুধু কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। বিদেশ থেকে আনা হোক বা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাই হোক না কেন, যারা করনীতি বোঝেন তাদেরকে নিয়োগ করা দরকার।'

তিনি আরও বলেন, 'করনীতি বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই গোটা প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে হবে।'

এ ছাড়াও, আশিকুর রহমান কর ছাড়ের বোঝা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

'কর ছাড়ের বিষয়টি দূর করতে আমরা সামান্যই কাজ করেছি। এখন কাজ করার সময়। শুধু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় নয়,' বলে মন্তব্য করেন আশিকুর রহমান।

রাজস্ব বোর্ডের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, কর সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও আইএমএফ নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামী জাতীয় বাজেটে রপ্তানিমুখী খাতের জন্য কর ছাড় কমানোর পরিকল্পনা করছে রাজস্ব বোর্ড।

আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর হার কমানো হবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

তিনি সব খাতের জন্য বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও কর ছাড় কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

5h ago