বাংলাদেশে কৃত্রিম সুতা রপ্তানিতে আগ্রহী চীন

বিদেশে পলিয়েস্টারের মতো কৃত্রিম সুতার পোশাকের চাহিদা বেশি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে কৃত্রিম সুতা রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী চীনের বস্ত্র ও পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ গত কয়েক বছর ধরে পরিবর্তিত বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা তাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনছেন।

বিদেশে পলিয়েস্টারের মতো কৃত্রিম সুতার পোশাকের চাহিদা বেশি। তুলার মতো প্রচলিত সুতা থেকে তৈরি পোশাক থেকে আয় তুলনামূলকভাবে কম হয়।

যেমন, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পোশাকের প্রায় ৩০ শতাংশ এখন কৃত্রিম সুতার। এটি পোশাক শিল্পে কৃত্রিম সুতার গুরুত্ব তুলে ধরে।

কৃত্রিম সুতার পোশাক বেশ লাভজনক। এসব কাপড় মোলায়েম ও টেকসই হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী সুতির পোশাকের তুলনায় বেশি দাম পাওয়া যায়। কৃত্রিম সুতার টি-শার্টের দাম সুতির টি-শার্টের প্রায় দ্বিগুণ।

তাই গত পাঁচ দশক ধরে দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা পণ্যের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো ও নিরবচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি গুণগত মান উন্নত করছে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক বিক্রির প্রায় সাত দশমিক নয় শতাংশ বাংলাদেশ থেকে আসে। আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য এটি নির্ভরযোগ্য উৎস। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পোশাকের বিশ্ববাজারের ১২ শতাংশ দখল করতে চায়।

গুয়াংডং জিনলং ফেব্রিক টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেডের হেড অব সেলস উইলিয়াম ইয়ান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশে কৃত্রিম সুতার চাহিদা বাড়ছে। বিশ্ববাজারে বেশি দামের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে এ দেশের পোশাক নির্মাতারা তুলা থেকে কৃত্রিম সুতার দিকে ঝুঁকছেন।'

গতকাল শনিবার রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় সেমস-গ্লোবাল ইউএসএর আয়োজনে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক শোতে (ডিআইএফএস) ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

উইলিয়াম ইয়ান জানান, বাংলাদেশে তাদের গ্রাহক ১২ জন। তারা নিয়মিত চীন থেকে সুতা কেনেন। আগে তারা শুধু তুলার সুতা কিনতেন। এখন কিনছেন কৃত্রিম সুতা।

তিনি বলেন, 'প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীর সংখ্যা খুবই কম হলেও যারা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চান তারা খোঁজখবর নিতে আসছেন।'

চীন থেকে বাংলাদেশে কৃত্রিম সুতার রপ্তানি ক্রমেই বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন ইয়ান।

শিশিশি ইয়ামিং ড্রেস অ্যান্ড উইভিং কোম্পানি লিমিটেডের সেলস ম্যানেজার ভিক্টোরিয়া ডেইলি স্টারকে জানান, বাংলাদেশের ১০ গ্রাহক চীন থেকে কৃত্রিম সুতা কেনার বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানান, নতুন গ্রাহক পেতে তারা এই প্রদর্শনীতে কৃত্রিম সুতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

ভিক্টোরিয়া বাংলাদেশি উৎপাদকদের প্রশংসা করে বলেন, 'তারা তৈরি পোশাকের ভবিষ্যৎ বাজার বোঝেন। বিশ্ববাজারে পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে তারা কাজ করছেন।'

এই প্রেক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশে তার প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করছেন।

শাওক্সিং অ্যানিউ টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) ভিভিয়েন ঝাং তাদের ব্যবসায়িক কৌশলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, 'আমরা প্রতি বছর বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ কৃত্রিম সুতা রপ্তানি করি। চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।'

তিনি জানান যে, বর্তমানে বাংলাদেশে তার প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক পাঁচ জন। তারা এই অঞ্চলে তাদের গ্রাহক বাড়াতে কাজ করছেন।

ঝাংয়ের ভাষ্য, শাওক্সিং অ্যানিউ টেক্সটাইল বাংলাদেশে কৃত্রিম সুতার ব্যবহার বাড়াতে চায়। কারণ এটি শুধু যে তাদের ব্যবসা বাড়াতে সহায়তা করবে তা নয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বস্ত্র খাত আরও উন্নত হতে পারবে।

এই সহযোগিতার পারস্পরিক সুবিধার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'কৃত্রিম সুতার ব্যবহার বাড়ানো হলে তা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে দক্ষ ও টেকসইয়ে অবদান রাখতে পারে। তা দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও শক্তিশালী অংশীদারিত্বের পথ প্রশস্ত করবে।'

শাওক্সিং হুই টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেডের সেলস ম্যানেজার অ্যান্থিয়া ও সাংহাই হাওফান ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং মে লিন বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।

এই প্রতিষ্ঠান দুইটি বাংলাদেশে বস্ত্র ও পোশাক খাতে ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে। তাই তারা এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।

পারস্পরিক সহযোগিতা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রদর্শনে এ ধরনের মেলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন অ্যান্থিয়া এবং ভালোমানের কাপড় ও সুতার মূল বাজার হিসেবে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন মে লিন।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

10h ago