নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি: সারাদেশে আমদানি পণ্য খালাস ও পরিবহন ব্যাহত
পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির ফলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ সারাদেশে আমদানি পণ্য খালাস ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে পরিবহন কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতির কারণে লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা ২০টি মাদার ভেসেলে (বিদেশ থেকে আসা বড় জাহাজ) আটকা পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন আমদানি পণ্য।
এসব জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট, বহির্নোঙরে চিফ হ্যান্ডেলিং অপারেটর সংস্থা এবং চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া মাদার ভেসেল থেকে খালাস করে নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে এবং যাওয়ার পথে প্রায় ৭৭৩টি জাহাজে আটকা পড়েছে আরও সাড়ে ১০ লাখ টন পণ্য, যা নিশ্চিত করেছে লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অরডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি)।
ফলে সারাদেশে ভোগ্যপণ্য ও উৎপাদনের কাঁচামালসহ নানা উপকরণ সরবরাহ কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পণ্যের মধ্যে রয়েছে আমদানি করা গম, চিনি, ডাল, মটর, লবণ, ভোজ্য তেল, বিভিন্ন ধরনের সার, সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য।
গত সোমবার চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে নোঙর করা লাইটার জাহাজ আল বাখেরায় ৭ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন, প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল রাত ১২টা থেকে সারাদেশে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। জাহাজটি ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী যাচ্ছিল।
ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, 'এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আকাশ মন্ডল ইরফান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি একাই সবাইকে হত্যা করে জাহাজ চালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা নৌ শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে। দাবি মানা পর্যন্ত কর্ম বিরতি চলবে।'
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের ৫০ ভাগেরও বেশি খালাস হয় বন্দরের বহির্নোঙরে। সেখানে বড় জাহাজ থেকে ছোট আকারের লাইটার জাহাজে পণ্য আনলোড করে তা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, খুলনাসহ প্রায় ৬০টি গন্তব্যে পরিবহন করা হয়। শ্রমিকদের কর্ম বিরতির ফলে এসব জায়গায় পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।
বিডব্লিউটিসিসি কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৭৩৮টি লাইটার জাহাজ ১০ লাখ ১১ হাজার টন ওজনের পণ্য (জামদানি) নিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর ও বরিশালসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার পথে আটকা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজ আটকা পড়েছে যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে ১২০টি এবং নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ঘাটে ৭৭টি।
এ ছাড়া কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করা ২০টি বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য গত বুধ ও বৃহস্পতিবার আরও ৯৭টি লাইটার জাহাজ বরাদ্দ দিয়েছিল বিডব্লিউটিসিসি।
বিডব্লিউটিসিসি কর্মকর্তারা জানান, ধর্মঘট শুরু হয়ে যাওয়ায় এগুলোর মধ্যে ৩৫টি জাহাজ প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার টন পণ্য বোঝাই করে চট্টগ্রাম থেকে আর রওনা হয়নি। বাকি ৬২টি জাহাজ এখনও খালাস কার্যক্রম শুরু করেনি।
Comments