লাইটার জাহাজ নীতিমালা নিয়ে আমদানিকারকদের আপত্তি

ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য আভ্যন্তরীণ নৌপথে লাইটার জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন নিয়ে সম্প্রতি প্রণীত নীতিমালার বিরোধিতা করেছেন আমদানিকারক ও জাহাজ মালিকদের একাংশ।

গত ১৫ অক্টোবর প্রণীত নীতিমালায় লাইটার জাহাজের সিরিয়াল ভুক্তি, বরাদ্দ ও জাহাজের ভাড়া নির্ধারণের একক দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে নতুনভাবে নাম দেওয়া বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অডিশন সেলকে (বিডব্লিউটিসিসি)।

ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এই নীতিমালার কারণে নৌপথে আমদানি করা পণ্য পরিবহনে সম্প্রতি বন্ধ হওয়া একচেটিয়া আধিপত্য আবার ফিরে আসবে। তাদের দাবি, এটি প্রতিযোগিতা আইন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চট্টগ্রামের লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠনের বিরোধিতার কারণে গত বৃহস্পতিবার নতুন ঘোষিত বেসরকারি ওই সেলটি জাহাজ বরাদ্দের নির্ধারিত কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে করে প্রতি বছর আমদানি করা ১০ কোটি টনের বেশি পণ্য, সার ও শিল্প কারখানার কাঁচামাল খালাস করে ৪০টি অভ্যন্তরীণ নৌপথে পাঠানো হয়।

এক হাজার ৮০০-র বেশি লাইটার জাহাজ পণ্য পরিবহনের কাজ করে থাকে।

নতুন নীতিমালা অনুসারে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সুপারভাইজরি কমিটি এই সেলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।

নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী, বিডব্লিউটিসিসির বরাদ্দ ছাড়া কোনো লাইটার জাহাজ বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রবন্দরে আসা মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত থাকতে পারবে না।

তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে, যে সকল ফ্যাক্টরি ও গ্রুপ অব কোম্পানি এর নিজস্ব লাইটার জাহাজ রয়েছে, সেই সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অব্যাহতি পত্র সাপেক্ষে তাদের নিজস্ব পণ্য কেবলমাত্র নিজস্ব জাহাজে পরিবহনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও, ব্যবসায়ীরা ভাড়া করা জাহাজ দিয়ে তাদের বহর বাড়াতে পারবে না অথবা তাদের বহরে থাকা কিন্তু কারখানার নামে নিবন্ধিত নয় এমন জাহাজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে না।

সিকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের নীতিমালা সরাসরি প্রতিযোগিতা আইনে দেওয়া বাণিজ্যের স্বাধীনতার বিরোধী।'

অভ্যন্তরীণ নৌপথে আমদানি করা পণ্য পরিবহনে জাহাজ পরিচালনায় ২০০৪ সালে তিন জাহাজ মালিক সংগঠন যৌথভাবে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) গঠন করে।

সংগঠনগুলো হলো—বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামের ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

গত বছরের ডিসেম্বরে কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামের নৌযান মালিক সমিতির নেতারা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আলাদাভাবে নৌযান চলাচল শুরু করে।

চট্টগ্রামের নৌযান মালিক সমিতির মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল বিলুপ্ত হওয়ায় আমদানিকারক ও জাহাজ মালিকরা পণ্য পরিবহন নিয়ে দরকষাকষি করতে পারছেন। এটি পরিবহন খরচ অনেক কমিয়ে দিয়েছে।'

টি কে গ্রুপের হেড অব বিজনেস (গ্রেইনস অ্যান্ড লজিস্টিকস) সত্যজিৎ দাস বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত নয় মাসে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে সময়মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইটার জাহাজ পেতে ঝামেলা হয়নি।'

চট্টগ্রাম-ঢাকা নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ টনপ্রতি প্রায় ১২০ টাকা কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'জাহাজের সিরিয়াল ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে এককভাবে একটি সংগঠনকে দিলে পুরোনো সিন্ডিকেশন ফিরে আসবে।'

তবে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাণিজ্যে শৃঙ্খলা আনা ও সমান প্রতিযোগিতার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরির সম্ভাবনা নেই। একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি অনিয়ম পরীক্ষা করার জন্য নতুন সংগঠনের কার্যক্রম তদারকি করবে।'

তার অভিযোগ, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার অভাবে জাহাজ মালিকদের একাংশ খুব কম ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করেছেন। ফলে অনেক জাহাজ মালিক লোকসানে পড়েন।

Comments