ঢাকার সঙ্গে ইইউ’র আলোচনা স্থগিত কি অশুভ লক্ষণ?

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, জোসেপ বোরেল,

নতুন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনা স্থগিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারের এই সিদ্ধান্ত দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতায় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি গত ৩১ জুলাই এক বার্তায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে সেপ্টেম্বরে পরিকল্পিত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে প্রথম দফার আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে এবং পরবর্তী তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি।'

এর আগে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়েছেন ইইউয়ের উচ্চ প্রতিনিধি ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। তারপর আলোচনা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিবৃতিতে জোসেপ বোরেল সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত বেআইনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

এদিকে ইইউর সঙ্গে আলোচনার জন্য অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঝুলে আছে। এর মধ্যে আছে জেনারালাইজড স্কিম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) প্লাস স্কিমের আওতায় ইইউতে রপ্তানির ওপর কম শুল্ক আরোপের জন্য আলোচনা।

কারণ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হলে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাবে না।

এছাড়া বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা নীতি, বিনিয়োগ, রুলস অব অরিজিন (আরওও) বা পণ্যের জাতীয় উৎস ও ব্যবসার পরিবেশ নির্ধারণের মানদণ্ড এবং সংলাপের বিষয়গুলো বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে ঝুলে আছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমুখী।'

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষক বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এবং শিগগিরই আলোচনা শুরু করতে পারলে অর্থনৈতিক সহযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তার ভাষ্য, 'বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইইউয়ের উদ্বেগের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে, কারণ ইইউ আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য।'

২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এটি বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৫৮ শতাংশ।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের জন্য একটি নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে, কারণ স্বাধীনতার পর থেকে ইইউ আমাদের খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার।

'পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জিএসপি প্লাস স্কিমের সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা। তবে ইইউ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে আলোচনা বিলম্বিত হবে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি মনে করেন, আলোচনা স্থগিতের কারণে রেয়াতি ঋণ পাওয়া ও বাংলাদেশের জন্য রুলস অব অরিজিন (আরওও) নির্ধারণও প্রভাবিত হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদার এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) স্কিমের আওতায় ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে আসছে।

এ ধরনের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা উপভোগ করে বাংলাদেশ ২৭টি দেশের এই বাণিজ্য ব্লকের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, পরিমাণের দিক থেকে চীনকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ ইইউতে সবচেয়ে বড় পোশাক সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে।

এছাড়া বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম ডেনিম সরবরাহকারী। ধারণা করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত প্রতি তিনজনের একজন বাংলাদেশে তৈরি ডেনিম ট্রাউজার পরেন।

ইইউ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তাদের বিধিমালায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার যোগ্য থাকবে।

কিন্তু শ্রম, মানবাধিকার, সুশাসন ও পরিবেশ সুরক্ষাসহ ৩২টি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের শর্ত পূরণ করে জিএসপি প্লাস স্কিমের আওতায় আসতে ব্যর্থ হলে ওই সময়ের পর বাংলাদেশকে সাড়ে ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে একমত পোষণ করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ইইউর বিনিয়োগকারী ও ক্রেতারা, যারা শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নিয়ে কাজ করছেন, আলোচনা স্থগিত হওয়ায় তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সরকার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ইইউর সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেবে বলে আমরা আশা করছি।

তার ভাষ্য, 'ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক যেন আরও অবনতি না ঘটে সেজন্য ব্যবসায়ীরা সরকারকে পরামর্শ দেবেন।'

(এই প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল। ইংরেজি প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন EU halts Dhaka talks. Is it a bad omen?)

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

7h ago