বর্ধিত রপ্তানি তথ্যে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

রপ্তানি আয়
স্টার ফাইল ফটো

রপ্তানি তথ্যের গরমিল সমন্বয়ের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের রপ্তানি আয় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী হতাশা প্রকাশ করেছেন।

তাদের যুক্তি, বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে তারা কঠিন সময় পার করছেন। কিন্তু, বর্ধিত রপ্তানি পরিসংখ্যানের কারণে তাদের পক্ষে সরকারকে এই কথা বোঝানো কঠিন ছিল।

মে মাসে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখানো হয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু বুধবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক গরমিল সমন্বয়ের পর রপ্তানি ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার কমে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু, রপ্তানির উচ্চ প্রবৃদ্ধির খবর এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হয়েছিল, যখন করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে দেশ ও বিদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল।

যেমন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি মাসের পর মাস রেকর্ড ভেঙেছে বলে দেখা গেছে। অথচ পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতা ও ব্রান্ডগুলো জানিয়েছিল, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বিক্রিতে মন্দা যাচ্ছে।

গতকাল একাধিক ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের অবনতি হলেও সরকার ও নীতিনির্ধারকরা প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে ভুল তথ্য পেয়েছেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সরকার রপ্তানিকারকদের নগদ প্রণোদনা কমিয়েছে এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ভর্তুকির বোঝা কমাতে সরকারের প্রচেষ্টা হিসেবে নগদ প্রণোদনা কমানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্ধিত তথ্য ব্যবসায় মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে, কারণ নীতিনির্ধারকরা এর ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন করেছে।

তিনি বলেন, 'বছরের পর বছর ধরে পণ্যের উচ্চ রপ্তানি দেখে সরকার ভেবেছিল, রপ্তানি খাত ভাল করছে, যদিও বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন।'

অন্যদের মতো তিনিও বিভিন্ন সময় বলেছিলেন, প্রকৃত রপ্তানি আয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর দেওয়া তথ্যের মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে। অথচ, তখন সংশোধনী আনতে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, যখন বিকেএমইএ ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন রপ্তানির জন্য অত্যাবশ্যক ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) ইস্যু করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যকে মেনে নেয়নি। তখন এই সন্দেহ আরও বেড়েছিল।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে ভুল তথ্য উপস্থাপনের ঘটনা দুঃখজনক।

'পরিমাণও অনেক বেশি,' বলেন তিনি।

তিনি বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের ক্ষেত্রে তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কারণ সরকার যখন পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন করে তখন পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রণোদনা, জিডিপির হিসাব এবং মাথাপিছু আয়ের মতো অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকের তথ্য যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। যেহেতু সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।

তিনি বলেন, 'রপ্তানি চালানের একাধিক গণনার কারণে, নীতিনির্ধারকরা ভুল নীতি নিতে পারেন।'

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের অভ্যন্তরে অবস্থিত কারখানাগুলোর স্থানীয় বিক্রিকেও রপ্তানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি বলেন, 'এ ধরনের বিক্রির বিষয়টি বিবেচনা করা হলে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যবধান ভুল মনে হবে না।'

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, 'জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রপ্তানি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর নিজস্ব কোনো তথ্যসূত্র নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'রপ্তানির পরিমাণ হিসাব করার সময় দেশীয় কারখানাগুলোর সুতা ও কাপড় বিক্রির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকায় এর পরিমাণ কিছুটা বেশি হতে পারে।'

'বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চূড়ান্ত তথ্য প্রস্তুত করার আগে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে,' বলেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলেন, 'কোনো পণ্য যখন দেশ ছেড়ে চলে যায় তখনই আমাদের তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকে। কোনো চালান ফেরত এলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর মনিটরিং করায় তা জানার সুযোগ নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago