১৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি তথ্য সংশোধন, আর্থিক হিসাবে বড় পরিবর্তন

রপ্তানি আয়
স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি তথ্যের গরমিল সংশোধনের পর আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় পর দেশের আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হলো।

এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুখবর হতে পারত, কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। কারণ দেশের অর্থনীতির অবস্থা অপরিবর্তিত আছে এবং বাংলাদেশ বাহ্যিক অ্যাকাউন্ট বা বাকি বিশ্বের সঙ্গে লেনদেন করতে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু, গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সংশোধনের পর তা ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার কমে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

ফলে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের (বিওপি) মূল উপাদান আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আর্থিক হিসাব দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে, যা এক বছরের বেশি সময় ধরে ঘাটতিতে ছিল।

অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে চলতি হিসাব ঘাটতিতে নেমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ঘাটতি ৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, হিসাব পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, 'ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যের যে ব্যবধান ছিল তা সমন্বয় করা হয়েছে। এ কারণে চলতি হিসাবের ব্যালেন্স ঘাটতি এবং আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে।'

দীর্ঘ সময় ধরে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি তথ্যের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যবধান ছিল। এই তথ্য সমন্বয়ের আগে বেশি চালান দেখানো হয়েছিল, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই প্রেক্ষাপটে গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থ পাচার হতে পারে।

এতে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আর্থিক হিসাবে বহিঃপ্রবাহ ছিল জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে আন্তঃপ্রবাহের গড় জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবাহ, যা অর্থপাচারের ইঙ্গিত দেয়।

গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, শুল্ক বিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে ইপিবি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। পদ্ধতিগত কারণে শুল্ক বিভাগ অনেক ক্ষেত্রে একই রপ্তানির তথ্য একাধিকবার বিবেচনায় নেয়, যা ডাবল বা ট্রিপল কাউন্টিং নামে পরিচিত।

তারা বলেন, কাস্টমস থেকে চালান প্রত্যাখ্যান করা হলেও রপ্তানির তথ্য তৈরির সময় সেগুলো বিবেচনা করা হয়। ফলে ইপিবির তথ্যে রপ্তানির প্রকৃত বিক্রির চেয়ে বেশি রপ্তানি দেখা যায়।

আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির সুপারিশ অনুযায়ী এই ব্যবধান সংশোধন করা হয়েছে।

সংশোধনের পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য গত মে মাসে ইপিবির তথ্য প্রকাশের সময় তা ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ৪৭ দশমিক ৪৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছিল।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের সংশোধনটি হিসাব পদ্ধতির পরিবর্তনের ফল।

তিনি বলেন, 'হিসাব পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে এটি অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি বোঝায় না।'

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক পতনের কারণে গত দুই বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে আছে বাংলাদেশ।

এছাড়া বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ও ডলারের বিপরীতে টাকার এক তৃতীয়াংশ দরপতন হয়েছে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমতে সময় লাগবে।

Comments

The Daily Star  | English

India restricts land port imports of Bangladesh’s RMG, food

India has imposed new restrictions on the imports of key goods from Bangladesh, including garments and agro-processed food, through land ports, a move expected to disrupt trade flows and add logistical hurdles for exporters..According to a notification issued today by India’s Directorate G

2h ago