ভারত থেকে ৭ পণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ পেতে আশাবাদী বাংলাদেশ
বছরব্যাপী অত্যাবশ্যকীয় ৭ পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে ভারতের গ্যারান্টি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। কেননা, এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশটি আগ্রহ দেখিয়েছে। চুক্তি সইয়ের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও চলছে।
বাংলাদেশের চাহিদা মূল্যায়ন ও সে বিষয়ে ভারতের গ্যারান্টি নিয়ে চলতি মাসে ২ প্রতিবেশী দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা আছে।
জ্যেষ্ঠ বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বৈঠকের জন্য আগামী ১৭ বা ২০ আগস্ট নির্ধারণ করেছি।'
এ ছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ১৮তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি যাবেন।
সে সময় ২ দেশের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) সইয়ের নিশ্চয়তা ও এর অগ্রগতিসহ নানা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা আছে।
জ্যেষ্ঠ বাণিজ্যসচিব জানান, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন, তাই পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরও খাদ্যশস্য আমদানি ও সিইপিএ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশ প্রতি বছর ভারত থেকে ৪৫ লাখ টন গম, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল, ২০ লাখ টন চাল, ১৫ লাখ টন চিনি, ১০ হাজার টন রসুন ও ১ লাখ ২৫ হাজার টন আদা সরবরাহের নিশ্চয়তা চেয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য ভারতকে অনুরোধ করা হয়।
যৌথ বিবৃতি অনুসারে, ভারত জানায় যে বিদ্যমান সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অনুরোধ ইতিবাচকভাবে বিবেচনার পাশাপাশি এ বিষয়ে সব চেষ্টা করা হবে।
এরপর গত ডিসেম্বরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভারত সফর করেন এবং ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানির চাহিদা তুলে ধরেন।
পরে ভারত বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি পরিসংখ্যান পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়ে বলেছে যে এটি খুব বেশি। এর একটি ছিল ৪৫ লাখ টন গম।
এ প্রসঙ্গে ভারত বলেছে যে বর্তমানে তারা বছরে গড়ে প্রায় ৭ লাখ টন গম সরবরাহ করছে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে অন্য দেশ, বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বছরে প্রায় ৬৫ লাখ টন গম আমদানি করতে হয়।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ইউক্রেনে পরাশক্তি রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ কারণে বিশ্বব্যাপী গমের দাম বেড়ে যায়। এমনকি, গম পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এরপর চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে যেকোনো সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এড়াতে সরকার ৭ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়।
পরে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত এক দশকে দেশে গম, চাল ও চিনির প্রকৃত চাহিদা এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও আমদানির পরিসংখ্যান, বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানির প্রকৃত চাহিদা জানতে ৫ সদস্যের কমিটি করে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মোহাম্মদ মাহবুবুল হককে কমিটির প্রধান করা হয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশোধিত পরিসংখ্যান পাঠায়।
তপন কান্তি ঘোষ আরও বলেন, 'আসন্ন বৈঠকে মূলত আমদানির পরিমাণ নিয়ে আলোচনা হবে। কারণ, ভারত সম্প্রতি ৭ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিষয়ে চুক্তিতে যেতে আগ্রহ দেখিয়েছে।'
যেহেতু এখনো চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি, সেহেতু সরকার কতটা আমদানি করবে এবং বেসরকারি আমদানিকারকরা কতটা আমদানি করবেন তা নির্ধারণ করা হয়নি বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, চুক্তি চূড়ান্ত হলে সরকারি-বেসরকারি খাতের দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
Comments