নরসিংদী

ফলনের পাশাপাশি চাহিদাও বেশি, লটকনে কৃষকের হাসি

লটকন
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার গিলাবে এলাকায় লটকন চাষ। ছবি: জাহিদুল ইসলাম/স্টার

আশানুরূপ ফলনের পাশাপাশি লটকনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খুশি নরসিংদীর চাষিরা। ব্যাপক উৎপাদনের পাশাপাশি বাজার দর কাঙ্ক্ষিত হওয়ায় এ জেলায় বাড়ছে লটকনের উৎপাদনও।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে এই মৌসুমি ফল।

নরসিংদী জেলা কৃষি ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমি বেশি। অন্যান্য এলাকার তুলনায় মাটির গুণ ও আবহাওয়ার জন্য জেলার শিবপুর উপজেলায় লটকন চাষ বেশি হচ্ছে।

প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১৭ টন লটকন উৎপাদিত হচ্ছে উল্লেখ করে কৃষি অফিস সূত্র জানায়, সেই হিসাবে ১ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩২ হাজার টন লটকন উৎপাদিত হয়েছে। এর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।

শিবপুর উপজেলার জয়নগর এলাকার আলমগীর হোসেন (৪০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩ বছর আগে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ১০ বিঘা জমিতে লটকন চাষ করি। এ বছর প্রায় দেড় লাখ টাকার লটকন বিক্রি করেছি।'

লটকন
দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মৌসুমি ফল লটকন। ছবি: জাহিদুল ইসলাম/স্টার

বেলাব উপজেলার দেওয়ানেরচর এলাকার মোবারক হোসেন (২৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা শুরু হলে কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন নিজেদের জমিতে দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রায় ৪ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করেছি। আমার বাগান সচ্ছলতা এনে দিয়েছে।'

ফুল হয় না কুঁড়িও ঝরে পড়ে না। সরাসরি গাছের কাণ্ড থেকে বের হয় লটকল। এর স্থানীয় নাম 'বুগি'। টক-মিষ্টিতে ভরপুর এই ফল এখানে হাজারো চাষির ভাগ্য বদলে দিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এখানকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করছেন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লটকন গাছ সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণের উপযুক্ত সময়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়। লটকন গাছ ঝোপের মতো হয়ে থাকে।

প্রতি বছর মাঘ- ফাল্গুনে লটকন গাছে মুকুল আসে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে তা পাকতে শুরু করে। বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। লটকন ফলনে তেমন কোনো খরচ নেই। গাছ লাগিয়ে একটু পরিচর্যা করতে হয়। গাছের গোড়ার চারদিকে জৈব সার দিলে ফলন ভালো হয়।

মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ লটকনের চাহিদা বাড়ছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই লটকনের চাষ বাড়ছে।

গত ৩০ বছরে বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লটকনের প্রসার ঘটেছে। এই ২ উপজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখন লটকন। লটকন চাষ করে বেকারত্ব দূর করার পথ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে।

লটকন
নরসিংদীতে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২০০ হেক্টর বেশি জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। ছবি: জাহিদুল ইসলাম/স্টার

লটকন চাষি ও স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, শিবপুর ও বেলাব উপজেলার লাল রঙের উঁচু মাটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান থাকায় সেখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

২০০৮ সাল থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে লটকন রপ্তানি হচ্ছে।

মৌসুমি এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে এ জেলার রায়পুরার মরজাল ও শিবপুর উপজেলা সদরে বসছে লটকনের হাট। প্রতিদিন পাইকাররা এসে এসব বাজার থেকে লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে লটকন কিনছেন।

লটকন বহনের সময় বস্তা ও পাত্রের ঘষা থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে হোতা পাতা। যা এর মানকে অক্ষুণ্ণ রাখে। তাই স্থানীয় বাজারে হোতা পাতারও কদর বাড়ছে।

রায়পুরা ও শিবপুরের কয়েকটি স্থানে রাস্তার পাশে লটকনের হাট বসেছে। প্রতিটি হাটে দৈনিক ৩-৪ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করছেন উৎপাদনকারীরা। স্থানীয় বাজারে গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি কেজি লটকন ৭০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্যে জানা গেছে, এবার প্রায় ২ হাজার টন লটকন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির আশা করা হচ্ছে। এ থেকে ২০০ কোটির বেশির টাকা আয় হবে।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশ-বিদেশে চাহিদা থাকায় ও অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বেশির ভাগ কৃষকই বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করছেন। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে লটকন রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার মানুষ লটকন চাষের দিকে ঝুঁকছেন।'

১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এএনএম মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লটকনে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও আয়রন আছে। এসব উপাদান আর্থ্রাইটিস ও পাকস্থলীর আলসারসহ ত্বকের অনেক সমস্যার সমাধান দেয়। এই ফল রুচি বাড়াতে ও মানসিক অবসাদ দূর করতেও সাহায্য করে।'

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago