সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা চামড়া
গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও কাঁচা চামড়া ফেলে দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৯০০-১২০০ টাকা এবং মাঝারি আকারের চামড়া ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস।
রাজধানীর সিটি কলেজের সামনে কাঁচা চামড়া কিনতে আসা লুৎফুর রহমান হিমু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা কম দামে কাঁচা চামড়া কিনছি। সরকার নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কিনলে লাভ হবে না। কারণ পরিবহন খরচ, লবণের দাম ও শ্রমিকদের মজুরি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।'
তিনি বড় আকারের (৩০-৩২ বর্গফুট) গরুর চামড়া ৯০০ টাকা ও মাঝারি আকারের (২০-২২ বর্গফুট) চামড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনছেন।
তিনি বলেন, 'আমি ছোট গরুর চামড়া ৫০০ টাকা দরে কিনছি ও ছাগলের চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনছি।'
একই এলাকার আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, 'বড় আকারের (৩৫ বর্গফুট) গরুর চামড়া ১২০০ টাকা, মাঝারি আকারের (২২-২৫ বর্গফুট) ৮০০-৯০০ টাকা এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনছি।'
সরকার এ বছর কোরবানির ঈদে ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০-৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। রাজধানীর বাইরে গরুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা বর্গফুট। আর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ২০ টাকা।
বাংলাদেশের ট্যানারি মালিকরা সারা বছর যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন, তার অর্ধেকই আসে ঈদুল আজহায়।
মানুষের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে কাঁচা চামড়া পাওয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর তারা ভালো দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে পেরেছে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, 'সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। তারা বড় আকারের গরুর চামড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং মাঝারি আকারের গরু ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং ছোট আকারের গরু ৫০০ টাকায় কিনছেন।
ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার শীর্ষ কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী শামসুল হক জানান, তিনি বড় আকারের গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং মাঝারি আকারের চামড়া ৬০০ টাকায় কিনছেন।
৬৭ বছর বয়সী শামসুল হক ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি ৮০০ পিস কাঁচা চামড়া কিনেছেন এবং দিন শেষে এ সংখ্যা মোট ৫ হাজার হতে পারে বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া আসছে। আর কী পরিমাণ গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা রাতে জানতে পারব।'
তবে, সিরাজগঞ্জের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা এবারও খারাপ অবস্থা পার করেছেন। সিরাজগঞ্জ সদর থানার বোহুলি ইউনিয়নের কালিদাসগাতির ব্যবসায়ী মমিনুল হক জানান, তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি পিস কাঁচা চামড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনছেন।
তিনি বলেন, 'লবণের দাম হওয়ায় আমাদের এক পিস চামড়া প্রস্তুত করতে ৭০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কিছুটা লাভ হলেও তা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। একসময় আমরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বা তার বেশি দামে কাঁচা চামড়া কিনেও যথেষ্ট লাভ করতাম। কিন্তু, এখন লাভ থাকে ২৫-৩০ টাকা।'
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১ কোটি ৩০ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল। এর মধ্যে ৮৫ লাখ গরু এবং ১৫ লাখ ছাগল, মহিষ ও ভেড়া।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বাংলাদেশ ১.১২ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের চেয়ে ০.৪২ শতাংশ বেড়েছে।
Comments