লোকসানের আশঙ্কায় কম দামে চামড়া কিনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

বৈরী আবহাওয়ায় চামড়ার মান নষ্টের আশঙ্কায় বরিশালের ব্যবসায়ীরা
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। ছবিটি বরিশাল থেকে তুলেছেন টিটু দাস।

গত কয়েক বছরের মতো এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া কিনেছেন। তাদের দাবি, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও লোকসানের আশঙ্কায় কম দামে চামড়া কিনতে হচ্ছে তাদের।

আজ শুক্রবার ঢাকার কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর লবণের দাম বেশি, শ্রমিক খরচ বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে- সব মিলিয়ে খরচ আগের চেয়ে বেশি। তাই কম দামে চামড়া কিনতে হচ্ছে।

তারা দাবি করেন, ব্যবসায়ীরাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কিনছেন। সেই বিষয়টিও আমাদের মাথায় রেখে কম দামে চামড়া কিনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, 'এ বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ শতাংশ চামড়া ট্যানারি এস্টেটে পৌঁছেছে। এ বছর আমরা এখনো পর্যন্ত দেশের কোথাও চামড়া ফেলে দেওয়ার সংবাদ পাইনি।'

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা, মাঝারি আকারের চামড়া ৬০০-৭৫০ টাকা এবং ছোট আকারের চামড়া ৫০০ টাকা বা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি পিস ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। দুটি জায়গায় ছাগলের চামড়া মাত্র ১০ টাকা বা তারও কম দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা রেজওয়ান রহমান বলেন, 'প্রায় এক লাখ টাকার একটি গরুর কাঁচা চামড়া ৯৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। অথচ ৫-৬ বছর আগেও গরুর চামড়ার দাম ছিল ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আমরা আগের যেমনটা দেখতাম তার চেয়ে এখন চাহিদা অনেক কম।'

সরকার এ বছর কোরবানির ঈদে ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০-৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। রাজধানীর বাইরে গরুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা বর্গফুট। আর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ২০ টাকা।

বাংলাদেশের ট্যানারি মালিকরা সারা বছর যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন, তার অর্ধেকই আসে ঈদুল আজহায়।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান জানান, এবারের কোরবানির ঈদে ঢাকার পোস্তায় ১ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি চামড়া শনিবারের সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা হয়তো সময়মতো পোস্তায় আসতে পারবেন না। ফলে, বৈরী আবহাওয়ায় কাঁচা চামড়ার গুণগত মান কমে যেতে পারে।'

পোস্তার অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তারা ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পাচ্ছেন না।

পোস্তার ব্যবসায়ী সুলতান বলেন, '২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা বকেয়া আছে।'

বর্তমানে সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু, কোরবানির ঈদে বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ঘনমিটারে। এ কারণে পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী নদীসহ পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা করছেন কয়েকজন ট্যানারি মালিক।

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser returns home after joining COP29 in Baku

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus returned home this evening wrapping up his Baku tour to attend the global climate meet Conference of Parties-29 (COP29)

1h ago