ব্যাংকিং খাতে সংস্কার অধরাই থেকে গেল

খেলাপি ঋণ
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আনতে সরকার বেশ কিছু সংস্কার আনতে যাচ্ছে।

পরবর্তী চারটি বাজেট ঘোষণার সময়ও তিনি এ জাতীয় সংস্কারের কথা উল্লেখ করতেন। অথচ তার মধ্যে মাত্র দু ,একটি উদ্যোগ নামে মাত্র বাস্তবায়নের মুখ দেখেছিল।

ফলে, শৃঙ্খলা ফেরানোর পরিবর্তে ব্যাংকিং খাত আরও বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে।

সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের সুশাসন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।

তবে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সমস্যা সমাধানে এসব উদ্যোগ যৎসামান্যই। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে যে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে একটি ফলপ্রসু্য সংস্কার আর কতো দূর!

নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী যখন ২০২৫ অর্থবছরের জন্য তার প্রথম বাজেট পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে।

বর্তমানে ব্যাংকিং খাত উচ্চ খেলাপি ঋণ, কিছু ব্যাংকের দুর্বল আর্থিক স্বাস্থ্য, বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের তারল্য সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নিয়মনীতির সঙ্গে লড়াই করছে।

২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা থেকে ৬৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অবলোপনকৃত ঋণ ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণসহ মোট সমস্যাগ্রস্থ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

যেমন- চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা অথবা বিতরণ করা ঋণের ৩১ শতাংশ, যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ২৫ হাজার ৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৫ শতাংশ।

একইভাবে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত বছর শেষে যা ছিল ১৩ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।

একইভাবে পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকসহ এক ডজন ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এছাড়া ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক চরম তারল্য সংকটে পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথিতে দেখা যায়, এসব ইসলামী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে চলতি হিসাবের ঘাটতিতে ভুগছে, কিন্তু ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো জামানত ছাড়াই তাদের তারল্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।এসব তারল্য সহায়তা ইনফ্লেশন বাড়াচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদদের মত। যা কয়েকমাাস যাবৎ ৯ শতাংশের বেশি।

আবার বিদেশি মুদ্রা দেশে আসার চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় ব্যাংকিং খাত দুই বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন ডলার সংকটে ভুগছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসনের অভাবের সাম্প্রতিক একটি বড় উদাহরণ হলো- বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি আইএফআইসি ব্যাংকের কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম সারওয়ারের নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে। এই নিয়োগ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইনের পাশ কাটিয়ে গেছে।

আইএফআইসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে ব্যাংকটির পর্ষদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিশেষ অনুমতি দেয়। অথচ এই নিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

নিয়ম অনুযায়ী- অবসর, অব্যাহতি বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ঠিক নিচের দুই লেভেলের কোনো কর্মকর্তা ওই ব্যাংকের উপদেষ্টা বা পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

অথচ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম সারওয়ারের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১৩ মে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের এপ্রিলে ওপেন মার্কেট অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবর্তিত সুদহার বেঁধে দেওয়া স্বায়ত্তসাশনের দুর্বলতার আরেকটি বাজে দৃষ্টান্ত ছিল। কারণ স্পষ্টতই  সরকারের চাপের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

আরেক সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় দেশের প্রথম ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে, ২০২০ অর্থবছরের পর এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সম্প্রতি এক সংলাপে বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা আনতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

Comments

The Daily Star  | English
Proper audits can ensure social compliance in the RMG industry

US top remittance source in Nov, Dhaka top recipient

The biggest source of all the remittance received by Bangladesh last November was the US, according to the latest report of Bangladesh Bank (BB)..Moreover, Dhaka secured the lion’s share of the foreign currencies..Bangladeshi migrants sent home $2,199.99 million in November. Of it, $

2h ago