ভর্তুকির চাপ বাড়াচ্ছে বিদ্যুৎ ও কৃষি খাত

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয় চলতি অর্থবছরের চেয়ে বেশি হতে যাচ্ছে। মূলত ভর্তুকি বাড়ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কৃষি খাতে।

সরকার বছরে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করলেও, সর্বোচ্চ ভর্তুকি বিদ্যুৎ খাতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত বিদ্যুৎ ও কৃষি খাতে বকেয়ার কারণে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়ছে।

আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি বরাদ্দ ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ১৭৪ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ অর্থের মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পেতে পারে ৪২ হাজার কোটি টাকা। যেখানে চলতি অর্থবছরের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার।

২০২১-২২ অর্থবছরের আগে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২৫ অর্থবছরে ভর্তুকি বরাদ্দ বৃদ্ধির মূল কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং বর্ধিত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট।

তিনি বলেন, সরকার কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, তবে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় এই খাতে আরও ভর্তুকির প্রয়োজন হবে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুরোনো ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়া না হলে সামগ্রিক ক্যাপাসিটি চার্জ বাড়বে, যা ভর্তুকির বোঝা আরও বাড়াবে।'

বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক মিশনও।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনই বিদ্যুৎ খাত থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা সম্ভব নয় কারণ এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার আগামী তিন বছর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে যাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা যায়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি হতে পারে ৭ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত কৃষিতে ভর্তুকি পাঁচ থেকে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ২৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমিয়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরে আবার সেটি ২৫ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকার সাধারণত ব্যবসায় প্রণোদনা হিসেবে রপ্তানি খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে ৯ হাজার ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, যা ৭ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এর কারণ হলো স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের আসন্ন উত্তরণের কারণে, ভর্তুকি পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে কারণ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলো রপ্তানিকারকদের সরাসরি নগদ সহায়তা দিতে পারে না।

এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছি, যা নতুন রপ্তানি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

আসন্ন বাজেটে রেমিট্যান্স ভর্তুকি ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা অপরিবর্তিত থাকবে এবং খাদ্যে ভর্তুকি ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা করা হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী

উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও এই খাতে বাজেট বরাদ্দ কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশের সমপরিমাণ তহবিল বর্তমান ২ দশমিক ৫২ শতাংশের বিপরীতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হতে পারে। তবে বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

সরকার উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ বাড়াতে পারে। তবে মাথাপিছু ভাতা একই থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তবে প্রবীণ নাগরিক এবং বিধবা, পরিত্যক্ত বা নিঃস্ব নারী সুবিধাভোগীদের জন্য ভাতা বাড়তে পারে।

প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি প্রতি মাসে ৬০০ টাকা এবং বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারী মাসে ৫৫০ টাকা করে ভাতা পাবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, কর্মসূচি সম্প্রসারণের আগে তারা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ব্যবস্থার সংস্কার করবেন।

সম্প্রতি এক সার্কুলারে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সামাজিক কর্মসূচির সব অর্থ উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে অনেক স্কিমের ভাতা এমএফএসের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তবে প্রায়শই সুবিধাভোগীদের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয় না, যা অনিয়মের সুযোগ করে দেয়।

সরকার প্রায় ১৩০টি কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুবিধা দিয়ে থাকে।

বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, কিছু কর্মসূচি সত্যিই দরিদ্রদের উপকারে আসছে কিনা। বিতরণে দুর্নীতির কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে বলেও তারা বলছেন।

কারা ভাতা পাচ্ছেন এবং এ কর্মসূচির লক্ষ্য কী, তার বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago