এবার চালের দাম বাড়তি
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেল ও মসুর ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির ভেতর চালের দাম বাড়ায় মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে, যারা আগে থেকেই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
গত ৪-৫ দিনের মধ্যে দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।
শুক্রবার নগরীর কারওয়ান বাজারে সরু মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা। ৭৫ থেকে ৭৬ টাকার নাজিরশাইল চাল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজিতে।
একইভাবে মোটা চালের দামও কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের রনি রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক কোরবান সরদার জানান, তারা সাধারণত মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে চাল কেনেন। কিন্তু সেখানকার ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'এ অবস্থায় আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালকল মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু সেখানেও দাম বেশি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আতপ চাল খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি। একই পরিমাণ চালের জন্য মিল মালিকরা এখন আড়াই হাজার টাকা চাচ্ছেন।'
কোরবান জানান, এখন খুচরা পর্যায়ে মোটা চালও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে তাদের।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বড় কয়েকটি কোম্পানির কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান কেনা এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জের আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতিকে দায়ী করেন। তবে তারা জোর দিয়ে বলছেন, বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই।
এক সপ্তাহ আগে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারির পর বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে গমের দামও বেড়ে যায়, যা চালের পর সর্বাধিক ব্যবহৃত খাদ্যশস্য।
এভাবে গত ৫ মাসে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
রাজধানীর আদাবর এলাকার বাসিন্দা নাসির আহমেদ বলেন, 'আপনি কি এমন কোনো নিত্যপণ্যের নাম বলতে পারেন যার দাম বাড়েনি। বাজারে আমাদের মতো মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যে কেনার মতো কিছুই নেই।'
মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার মুদি দোকানী মোহাম্মদ ফিরোজ মিরপুর-১১ নম্বরের কিচেন মার্কেট থেকে তালিকার সবকিছু না কিনেই ফিরে আসেন।
তিনি বলেন, 'আমি ১ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু মুরগি, সয়াবিন তেল ও সবজি কিনতেই সব টাকা খরচ হয়ে যায়। ডিম কিনতে পারিনি।'
ফিরোজ জানান যে, তিনি আশা করেছিলেন ঈদের পর পণ্যমূল্য কমবে। কিন্তু কমার বদলে তা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকায় মোটা চালের তুলনায় সরু চালের চাহিদা বেশি।
গত বছরের নভেম্বরে সরকার ডিজেলের দাম প্রায় ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পরে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের দাম বাড়তে শুরু করে। এর ফলে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, প্রভাব পড়ে বাজারের সর্বক্ষেত্রে।
পরবর্তীতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আমদানি পণ্যের সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ার কারণে পণ্যমূল আরেক দফা বাড়ে।
বাদামতলী চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন জানান, গত ৪-৫ দিনে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম পাইকারিতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা করে বেড়েছে।
নিজাম উদ্দীনের ভাষ্য, শেষ দফায় দাম বেড়েছে সিলেট বিভাগে আকস্মিক বন্যার কারণে। তিনি বলেন, 'এ ছাড়া চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছু বড় কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। তারা একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে চাল কেনে। ফলে দাম বাড়ে।'
নিজামের কাছ থেকে জানা যায়, এখন প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
'কেনার প্রতিযোগিতা শুরুর আগে এই দাম ছিল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।'- বলেন নিজাম।
Comments