রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ ১০ দিন বন্ধ থাকবে, আশঙ্কায় ইউরোপ

রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের সবচেয়ে বড় পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ১ এ আজ সোমবার থেকে বার্ষিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ কার্যক্রমে প্রায় ১০ দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে জার্মানিতে।
নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলান। ফাইল ছবি: রয়টার্স
নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলান। ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের সবচেয়ে বড় পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ১ এ আজ সোমবার থেকে বার্ষিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ কার্যক্রমে প্রায় ১০ দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে জার্মানিতে।

তবে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, গ্যাস বন্ধের সময়সীমা ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আরও বাড়তে পারে।

আজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাল্টিক সমুদ্রের নিচ দিয়ে নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ৫৫ বিলিয়ন ঘন মিটার (বিসিএম) গ্যাস রাশিয়া থেক জার্মানিতে প্রবাহিত হয়।

আপাতত ১১ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত চলবে সংস্কার কাজ।

গত মাসে রাশিয়া নর্ড স্ট্রিমের মোট সক্ষমতার ৪০ শতাংশ প্রবাহ কমিয়ে দেয়। কারণ হিসেবে তারা জানায়, পাইপলাইনের একটি যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাওয়ায় সেটি মেরামতের জন্য জার্মান সংস্থা সিমেনস এর কানাডা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে, যেটি এখনও মেরামত হয়ে ফিরে আসেনি।

কানাডা জানিয়েছে, মেরামত করা টারবাইনটি তারা ফিরিয়ে দেবে, তবে সঙ্গে তারা এটিও জানায়, রাশিয়ার জ্বালানী খাতের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধের আওতা আরও বাড়াবে দেশটি।

ইউরোপের দেশগুলোর আশঙ্কা, রাশিয়া রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমাকে দীর্ঘায়িত করবে, যাতে ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে আসন্ন শীত মৌসুমে গ্যাসের সংরক্ষণের পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটবে এবং ইতোমধ্যে চলতে থাকা গ্যাস সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে। এরকম পরিস্থিতিতে সরকারগুলোকে দাম বাড়ানো সহ অন্যান্য জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গ্রাহকদের ওপর।

জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক দাবি করেন, রাশিয়ানরা সংস্কারের অজুহাত তুলে দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে পারে।

'হয়তো তারা বলবেন, আমরা এখন আর পাইপলাইন চালু করতে পারছি না', দাবি করেন হাবেক।

তবে রাশিয়া তেল ও গ্যাসের মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, এ ধরনের দাবিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ উড়িয়ে দেন। তিনি জানান, সংস্কারের জন্য সরবরাহ বন্ধ একটি নিয়মিত ও পূর্বনির্ধারিত কার্যক্রম। কেউ নতুন করে কোনও ধরনের সংস্কার 'আবিষ্কার' করছে না, দাবি করেন পেসকভ।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে গ্যাস পাঠানোর জন্য আরও বড় কিছু পাইপলাইন রয়েছে, তবে সেগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের প্রবাহ কমছে।

বিশেষত, মে মাসে ইউক্রেন একটি প্রবাহ রুট বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে এ ধরনের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বন্ধের কারণ হিসেবে ইউক্রেন 'দখলদার রুশ বাহিনীর হস্তক্ষেপের' কথা উল্লেখ করে।

রুবলে গ্যাসের দাম দেওয়ার দাবি না মানায় রাশিয়া বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে গ্যাসের প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।

জার্মান সংস্থা জুকুফট গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিম কেহলার বলেন, 'গত কয়েক মাসে আমরা একটি বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। তা হল, প্রয়োজনে পুতিন যেকোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে আগ্রহী। সুতরাং, নর্ড স্ট্রিমের প্রবাহ পুরোপুরি থেমে যাওয়ার সম্ভাবনাকে আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না।'

টারবাইনে ঝামেলা

কানাডা গত সপ্তাহের শেষে নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইনের যন্ত্রাংশ রাশিয়ায় ফেরত পাঠাতে 'নির্দিষ্ট মেয়াদযুক্ত ও বাতিলযোগ্য' অনুমতি দেয়। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে জার্মানি। দেশটি শীত মৌসুমে ঘর গরম রাখার জন্য রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।

তবে ইউক্রেনের জ্বালানী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কানাডার এ সিদ্ধান্তে 'গভীরভাবে মর্মাহত' এবং দেশটি আশা করছে কানাডা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। এ সিদ্ধান্তকে কিয়েভ 'রাশিয়ার পছন্দ অনুযায়ী' দেশটির বিরুদ্ধে আরোপিত বিধিনিষেধের খুঁটিনাটি পরিবর্তনের সমতুল্য বলে অভিহিত করে।

সিমেনস জানিয়েছে, তারা প্রয়োজনীয় সব ধরনের অনুমোদন ও লজিসটিকের ব্যবস্থা করছে যাতে টারবাইনটি দ্রুত রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়া যায়।

বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি

রাশিয়া থেকে গ্যাসের প্রবাহ থেমে গেলে জার্মানির অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে। বাভারিয়া রাজ্যের ভিবিডব্লিউ ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গ্যাস না পাওয়া গেলে জার্মানির অর্থনীতিতে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ১৯৫ বিলিয়ন ডলারের (১৯৩ বিলিয়ন ইউরো) সমপরিমাণ ক্ষতি হতে পারে।

জার্মানির জন্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা গ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জার্মানির জন্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা গ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভিবিডব্লিউ'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বারট্রাম ব্রোসার্ত জানান, রাশিয়া থেকে হটাত গ্যাসের আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে জার্মানির ৫৬ লাখ মানুষ রাতারাতি চাকরি হারাতে পারেন।

এ ধরনের কোনও বিপর্যয়ের প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী হতে পারে। গ্যাসের প্রবাহ থমকে গেলে সার্বিকভাবে ইউরোপে গ্যাসের দাম আরও বেড়ে যাবে, যা ইতোমধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

ইউরোপের মানদণ্ড হোলসেল ডাচ গ্যাস প্রাইস গত বছরের জুলাইর তুলনায় ৪০০ শতাংশ বেড়েছে।

নেদারল্যান্ডের জ্বালানী মন্ত্রী রব ইয়েত্তেন জানান, নর্ড স্ট্রিমের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে এর প্রভাব পুরো উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে পড়বে।

নর্ড স্ট্রিমের মাধ্যমে গ্যাস রপ্তানি থমকে গেলে রাশিয়াও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুনে তারা বাড়তি তেল ও গ্যাস রপ্তানি থেকে ৩৯৩ বিলিয়ন রুবল পাওয়ার প্রত্যাশা করছে, যেটি বাজেটের প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি আয়।

শুধু জুলাই মাসেই রাশিয়া বাজেট পরিকল্পনার চেয়ে ২৫৯ বিলিয়ন রুবল বেশি পাবে।

সব মিলিয়ে, ইউরোপে 'তেল-গ্যাস' রাজনীতি বেশ জমে ওঠেছে। এখন সবার দৃষ্টি নর্ড স্ট্রিমের সংস্কার কার্যক্রম কতদিন ধরে চলে, সেটার দিকে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

56m ago