ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১ বছর

ইউক্রেনে আগ্রাসন, রাশিয়া, ভ্লাদিমির পুতিন, ভলোদমির জেলেনস্কি,
রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত মারিউপোলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের রাশিয়ার আগ্রাসন আজ শুক্রবার দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। তবে, এখনো পর্যন্ত এই আগ্রাসন শেষের কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। রুশ হামলা শুরুর পর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বৈরিতা দেখা দিয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানী কিয়েভ দখল এবং ইউরোপপন্থী সরকারকে উৎখাত করতে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করেন। কিন্তু, ইউক্রেনের তীব্র প্রতিরক্ষা এবং সামরিক ভুলের কারণে সেই আশা এখনো পূরণ হয়নি।

ইউক্রেন ২০২২ সালের শেষের দিকে পাল্টা আক্রমণে সফল হয়েছিল এবং এই আগ্রাসনে উভয়পক্ষের ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অবশ্য মস্কো এই হামলাকে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' হিসেবে দাবি করে আসছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন তার দেশের বিরুদ্ধে কঠোর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে সংঘাত দ্বিগুণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্ভাব্য যে কোনো আলোচনার বিষয়ে তার কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছেন। সুতরাং, আপাতত এই সংঘাতের শান্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে হচ্ছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ রুশ হামলার প্রথম বার্ষিকীতে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং মস্কোকে সেনা প্রত্যাহার ও হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪১টি এবং বিপক্ষে পড়েছে ৩২টি ভোট। বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, মালি, নিকারাগুয়া ও সিরিয়া এই ৬টি দেশ রাশিয়ার সঙ্গে 'না' ভোট দিয়েছে।

বেইজিংয়ের শীর্ষ কূটনীতিকের মস্কো সফরের ঠিক একদিন পর চীন ভোট দেওয়া থেকেছ বিরত ছিল। সফরে চীন ও রাশিয়া সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতিতে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি জাতিসংঘের এই উদ্যোগকে 'অর্থহীন' আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

জেলেনস্কি টুইট করেছেন, 'এই প্রস্তাব ইউক্রেনের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থনের জোরালো সংকেত।'

এদিকে, প্যারিস আইফেল টাওয়ারকে নীল ও হলুদ রঙের ইউক্রেনীয় পতাকায় আলোকিত করেছে এবং ইউক্রেনের পতাকায় সেজে লন্ডনে একটি সমাবেশ হয়েছে। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবনগুলোও একই রঙে রাঙানো হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত নিয়ে ক্রেমলিনের বক্তব্যকে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, 'ইউক্রেনকে ব্যবহার করে সম্মিলিত পশ্চিমারা রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। রাশিয়াকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে। এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।'

ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতৃত্বাধীন তার মিত্ররা এই ধরনের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এই আক্রমণকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে পরাধীন করতে অন্যায্যভাবে ভূমি দখল হিসেবে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার জি-৭ নেতা ও জেলেনস্কির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন এবং রাশিয়ার সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

এ সপ্তাহে পুতিন বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি ও শাসন ব্যবস্থা পশ্চিমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হয়েছে।

উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে পুতিন বৃহস্পতিবার নতুন সারমত মাল্টি-ওয়ারহেড আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিউ স্টার্টতে (স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিয়েটি) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার অংশগ্রহণ স্থগিত করেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বড় আকারের লড়াই হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুত এবং দক্ষিণে ভুহলেদারের আশেপাশে। এসব অঞ্চলের হাজার হাজার সেনা নিহত হয়েছেন।

রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া বাখমুতের কাছে ইউক্রেনের একটি ট্যাঙ্ক পার্কের কাছে বৃহস্পতিবার ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ট্যাঙ্ক অপারেটর জুনিয়র সার্জেন্ট ওলেহ স্লাভিন রয়টার্সকে বলেন, আমরা যদি বাখমুত ছেড়ে দেই, তাহলে সবকিছু আরও কঠিন হয়ে উঠবে। আমরা কোনো অবস্থাতেই এটা ছেড়ে দিতে পারি না। আমরা এটা ধরে রাখব।

ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগ্রাসনের এক বছরপূর্তীর দিন যত ঘনিয়ে আসছে পূর্ব ও দক্ষিণে রাশিয়ার হামলা বাড়ছে। রুশ সেনারা রুশ সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলের তিনটি অঞ্চল- চেরনিহিভ, সুমি ও খারকিভের অন্তত ২৫টি শহর ও গ্রামে গোলাবর্ষণের প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের।

আগ্রাসন শুরুর পর ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এর বাইরে থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্রমবর্ধমান অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago