ইউক্রেনে শপিং মলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত অন্তত ১৮
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের একটি শপিং মলে অন্তত ১৮ ব্যক্তি নিহত হন।
আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
দমকল বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শপিং মলের ধ্বংস্তুপ থেকে আহতদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালণা করছে।
সোমবারের এ হামলায় ইতোমধ্যে জাতিসংঘ নিন্দা জানিয়েছে। কিয়েভের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে ক্রেমেনচুক অঞ্চলের একটি ব্যস্ত শপিং মলে ২টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, শপিং মলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় সেখানে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই শপিং মল রাজধানী কিয়েভ থেকে ৩০০ কিমি দূরে
পোলতাভা অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্রো লুনিন জানান, হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং প্রায় ৩৬ জন এখনও নিখোঁজ আছেন।
জার্মানিতে জি৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণরত নেতাদের পক্ষ থেকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারা এ হামলাকে 'ঘৃণ্য' বলে অভিহিত করেন।
জার্মান সরকারের মুখপাত্র নেতাদের পক্ষ থেকে দেওয়া বার্তায় জানান, 'রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এর দায় নিতে হবে।'
জেলেনস্কি সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া ভিডিও বার্তায় আরও জানান, 'এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি শপিং সেন্টারে উদ্দেশে সুপরিকল্পিত হামলা। মৃতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন জেলেনস্কি।
রাশিয়া জানিয়েছে, তারা একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ক্রেমেনচুকের একটি অস্ত্রাগারের উদ্দেশ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই অস্ত্রাগারে সংরক্ষিত পশ্চিমা অস্ত্র ও গোলাবারুদে আগুন ধরে যায়, যেটি পার্শ্ববর্তী শপিং মলে ছড়িয়ে যায়।
ইউক্রেনের প্রধান কৌসুলী ইরিনা ভেনেডিক্তোভা জানান, কাছের একটি কারখানায় আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে। তবে এটি বন্ধ ছিল এবং একে সামরিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত করা হয় না।
এই আক্রমণের পর, ইউক্রেনের অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আজ মঙ্গলবার এক বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করেছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুইয়ারিক জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা 'নিন্দনীয়।'
ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানের শুরু থেকেই রাশিয়া বেসামরিক ব্যক্তি ও স্থাপনায় হামলার কথা অস্বীকার করে এসেছে। তবে কিয়েভ ও পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।
এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ২ পক্ষের হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সারা বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট ও জ্বালানীর উচ্চ মূল্যের সমস্যায় ভুগছে।
জার্মানির সম্মেলনে জি৭ নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন, 'যতদিন প্রয়োজন' ততদিন তারা ইউক্রেনের পাশে থাকবেন এবং রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশটিকে চাপে রাখবেন। রাশিয়ার তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণের মত উদ্যোগের কথা আলোচনা করেন তারা।
জেলেনস্কি তার ভিডিও বার্তায় জি৭ নেতাদের কাছে আরও অস্ত্র পাঠানোর অনুরোধ করেন। এছাড়াও, তিনি ইউক্রেনকে খাদ্য শস্য রপ্তানিতে সহায়তা দেওয়া ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেদ্ধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানান।
ইতোমধ্যে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়া গত ১০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত বহি:বিশ্বের কাছে দেনা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই নজিরবিহীন ঘটনাকে মার্কিন প্রশাসন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তবে রাশিয়া এই দাবি প্রত্যাখান করেছে। তারা বিনিয়োগকারীদেরকে আহ্বান করে পশ্চিমের আর্থিক এজেন্টদের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে। তাদের দাবি, তারা ঠিকমতই অর্থ পাঠিয়েছেন, কিন্তু বন্ডহোল্ডাররা সে অর্থ পাননি, যার জন্য এই এজেন্টরা দায়ী।
Comments