যারা বদনাম দিয়েছে তাদের টাকায় পদ্মা সেতু করবো না এটাই আমার সিদ্ধান্ত ছিল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কানাডার আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে কোনো দুর্নীতি তো হয়নি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেসব অভিযোগ করেছে সেগুলো সব ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। এই কথার পরে তো আর কোনো কথা থাকে না কিন্তু তারপর যারা আমাদের বদনাম দিয়েছে তাদের টাকায় আমি পদ্মা সেতু করবো না এটাই আমার সিদ্ধান্ত ছিল।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রহমতে সম্পূর্ণ বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করেছি।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পদ্মা সেতু (উত্তর) থানা ও পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানার কার্যক্রমের উদ্বোধন, বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত ১২০টি বাড়ি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের কাছে হস্তান্তর এবং ১২টি পুলিশ হাসপাতাল আধুনিকায়নের কাজ, ৬টি নারী পুলিশ ব্যারাক ও অনলাইন জিডি ব্যবস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু। আপনারা জানেন, আমাদের দেশের একজন বিশ্বখ্যাত মানুষ হলেও একটা ব্যাংকের এমডি পদ তার বয়সের কারণে ছেড়ে দিতে হচ্ছে সেটা তিনি মানতে পারেননি। একদিকে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে দুই-দুটা মামলা করে হেরে গেছে, পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে তদবির করে—যেভাবেই হোক আমাদের পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আমাদের ওপর নিয়ে আসে। যখন দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে না তখন বলে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র ছিল। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম এবং সেই থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, কাজে পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় এবং একটি মামলাও করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কানাডা আদালতে, সেই আদালতের রায়ে স্পষ্টভাবে কোর্ট বলে দেয়—এখানো কোনো দুর্নীতি তো হয়নি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেসব অভিযোগ করেছে সেগুলো সব ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা।
এই কথার পরে তো আর কোনো কথা থাকে না, কিন্তু তারপর যারা আমাদের বদনাম দিয়েছে তাদের টাকায় আমি পদ্মা সেতু করবো না এটাই আমার সিদ্ধান্ত ছিল। আল্লাহর রহমতে সম্পূর্ণ বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। এই পদ্মা সেতু রক্ষণা-বেক্ষণ, যারা যাবে তাদের নিরাপত্তা বিধান এটাও আমাদের কর্তব্য। কাজে পদ্মা সেতুকে সুরক্ষিত করা এবং যাত্রী সেবা দেওয়া বা আশে পাশে যে জনগণ তাদেরও সেবা দেওয়া আমাদের কর্তব্য সে জন্য আমরা দুটি থানা; জাজিরায় পদ্মা সেতু দক্ষিণ আর মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু উত্তর—এই দুটি থানার আধুনিক ভবন সম্পন্ন করা হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশের দরিদ্র, শোষিত-বঞ্চিত মানুষ, গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের দিকে কেউ তাকানোর প্রয়োজনই মনে করেনি। অবশ্য মনে করবে কীভাবে! যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তারা ক্ষমতা নেয় ভোগের জন্য। ক্ষমতাটা তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য। যেহেতু সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী তারা ব্যস্ত থাকবে কীভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবে। একটা পর একটা ১৯-২০টার মতো ক্যু হয়। সারা রাত কারফিউ থাকে। বাংলাদেশের মানুষের কোনো অধিকারই ছিল না। না স্বাধীনভাবে চলার অধিকার-না বাঁচার অধিকার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর থেকে আমরা জাতির পিতার নেওয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প আবার চালু করি, পাশাপাশি দরিদ্র-হতদরিদ্র মানুষের জন্যআশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ করে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ আমরা নিই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না।
মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে যেয়ে বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়ায় পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় পুলিশ বাহিনীর কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উদ্যোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতির নামে এখন যারা আমাদের বিরোধিতা করে। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস এবং তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে...আমাদের অনেক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্য দিবালোকে তারা মেরেছে, হত্যা করেছে গাইবান্ধা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের রাজনীতি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা আর আগুন দেওয়া। রেলে-লঞ্চে-বাসে-কোথায় না আগুন দিয়েছে তারা। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে সেটাই নাকি তাদের আন্দোলন। যা জনগণ কখনোই সমর্থন করেনি। এই আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে অনেক পুলিশকে জীবন দিতে হয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। আমরা চাই আমাদের দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে।
পুলিশের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদক এবং অস্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তার দিকে বিশেষভাবে আরও দৃষ্টি দিতে হবে।
একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারবো। যদিও আজ বিশ্বব্যাপী যে সমস্যা একদিকে করোনাভাইরাস অতিমারি, তার পরে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। যারা ফলে সারা বিশ্বেই আজকে খাদ্যের অভাব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ইতোমধ্যে আমি সবাকে আহ্বান করেছি, সারা বিশ্বে যখন অভাব দেখা দিচ্ছে, জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, এমনকি উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় একটি পরিবার কতটুকু ভোজ্যতেল কিনতে পারবে সেগুলো মেপে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে অধিক পরিমাণে কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। জার্মানির মতো জায়গায় এমন অবস্থা। আমেরিকার অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে প্রত্যেকটা খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে এখনো আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা হচ্ছে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা। আমাদের উর্বর মাটি, ১ ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। যে যা পারবেন, উৎপাদন করবেন—বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ মে সারদা পুলিশ একাডেমিতে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলেছিলেন, 'আপনারা জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় এ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। আমি দুনিয়ার অনেক জায়গায় গিয়েছি। গ্রেট ব্রিটেনে দেখেছি একজন সিপাহীকেও জনসাধারণ শ্রদ্ধা করে। কোনো পুলিশ কর্মচারীকে দেখলে তারা আশ্রয় নেওয়ার জন্য তার কাছে দৌড়ে যায়। তারা মনে করে পুলিশ তাদের সহায়। আমাদের দেশেও পুলিশ বাহিনী সেভাবেই জনগণের আস্থা অর্জন করবে যেন জনগণ মনে করে যে তার জীবন রক্ষায়, মান রক্ষায় পুলিশই হচ্ছে শেষ ভরসা। কাজেই পুলিশের কাছেই তারা সেই আশ্রয়টা পাবে, সেই ভরসার স্থান হিসেবে পুলিশকে জনগণের সামনে নিজেকে সেভাবে তুলে ধরতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন। জাতির পিতার এই নির্দেশ আপনারা মেনে চলবেন সেটাই আমি চাই।
Comments