বাজারে ডিমের দামও বাড়তি

প্রায় ৫ বছর আগে একবার বিশ্ব ডিম দিবসে ঢাকার খামারবাড়ি এলাকায় সস্তায় ডিম কিনতে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। সেদিন ক্রেতার তুলায় ডিমের সরবরাহ ছিল কম। ফলে ডিম পাওয়ার জন্য সৃষ্ট হট্টগোল সামলাতে পুলিশের লাঠিপেটার বিষয়টি ছিল তখনকার আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি।
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৫ বছর আগে একবার বিশ্ব ডিম দিবসে ঢাকার খামারবাড়ি এলাকায় সস্তায় ডিম কিনতে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। সেদিন ক্রেতার তুলনায় ডিমের সরবরাহ ছিল কম। ফলে ডিম পাওয়ার জন্য সৃষ্ট হট্টগোল সামলাতে পুলিশের লাঠিপেটার বিষয়টি ছিল তখনকার আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি।

'আন্ডা' চেয়ে 'ডান্ডা' খাওয়ার ওই ঘটনাকে উপজীব্য করে ছড়াকার ব্রত রায় পত্রিকার পাতায় লিখেছিলেন, 'ডিম আগে না মুরগি আগে/তর্ক আজও সচল—/থাকুক না! বাট ডিম বিহনে/এই দুনিয়া অচল!'

পুষ্টিবিদরা ডিমকে অভিহিত করেন 'আদর্শ' খাবার হিসেবে। দেশের নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য প্রোটিনের সবচেয়ে সস্তা উৎসও এটা।

এই মুহূর্তে বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এরমধ্যে 'সস্তার' ডিম কিনতেও এখন বাড়তি পয়সা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা।

গত কয়েক দিন ধরে দাম বাড়তে থাকায় বর্তমানে ঢাকার বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম (লাল) বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, এখন ২ জোড়া ডিম কিনতে ভোক্তাদের এক মাস আগের তুলনায় গড়ে ২০ শতাংশ বেশি দাম দিতে হচ্ছে। গতকাল শনিবার ঢাকায় ৪টি ডিম বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে। কিছুদিন আগেও যা ছিল ৩০-৩২ টাকা।

উৎপাদকদের দাবি, গত কয়েক মাসে মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত সয়ামিল ও ভুট্টার দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ফলে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এর বাইরে পরিবহন খরচ বাড়ার বিষয়টিও ডিমের মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ।

ডিম উৎপাদকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। যে কারণে ডিমের উৎপাদনও কমেছে।

মিরপুরে বর্ধিত পল্লবী এলাকার ডিমের পাইকারি বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার জানান, গত কয়েক দিন ধরেই ডিমের দাম বাড়তি। এখন তারা প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি করছেন ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়।

নুরুল আলমের ভাষ্য, আগে যে ক্রেতারা একসঙ্গে ১ ডজন ডিম কিনতেন, এখন তারা কিনছেন ৮টি করে। আর যারা ৪টি করে কিনতেন, তারা কিনছেন ২টি করে।

ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আহমেদ বলছেন, মুরগির খাবারের ৭৫ শতাংশই আমাদানি করতে হয়। বিশ্ববাজারের খাবার তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়েছে। যে কারণে খাবারের খরচও বেড়েছে। এছাড়া কাঁচামালের সংকটের কারণে ফিড মিলাররাও খাবার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এখন শ্রমিকের মজুরি ও বিদ্যুৎ খরচও বাড়তি। এতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। এমনটা হলে পালিত মুরগি বাঁচিয়ে রাখাটাই কঠিন হয়ে পড়বে। ডিমের দাম আরও বাড়বে।

এর বাইরে ডিমের সার্বিক উৎপাদনও ২০ শতাংশ কমেছে বলে জানাচ্ছেন উৎপাদকরা।

বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিক বলেন, 'দেশে ডিম উৎপাদন কমে গেছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ যথেষ্ট নয়। ফলে দামও বাড়তি।'

তিনি জানান, দেড় বছর আগেও একবার এক হালি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ৪৮ টাকায় উঠেছিল। তার বক্তব্য, 'খাবারের দাম না কমা পর্যন্ত ডিমের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।'

উৎপাদকদের হিসাবে, প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে দেশে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি পিস ডিম প্রয়োজন।

ফার্মের ডিমের বাইরে গতকাল রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে প্রতি ডজন দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে যার দাম ছিল ১৬৫ টাকা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের মতে, এই মুহূর্তে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে সব খাতেই।

তার ভাষ্য, উৎপাদন খরচের পাশাপাশি উৎপাদকদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। এই বাড়তি খরচ মেটাতে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন খামারিরা।

নাজের হোসাইন বলেন, 'সীমিত আয়ের মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দিন দিন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।'

এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে বেশি সময় লাগবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Six state banks asked to cancel contractual appointments of MDs

The Financial Institutions Division (FID) of the finance ministry has recommended that the boards of directors of six state-run banks cancel the contractual appointment of their managing directors and CEOs..The six state-run banks are Sonali Bank, Janata Bank, Agrani Bank, Rupali Bank, BAS

55m ago