বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে ২৫ কিলোমিটার যানজট
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/very_big_201/public/images/2022/07/08/tangail.jpg?itok=rHD0DE-F×tamp=1657261773)
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাসে শত শত যানবাহন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে এই স্থানের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। পুরো রাস্তায়ই যানজট। আজ শুক্রবার ভোর থেকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
প্রচণ্ড গরমে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ঈদে ঘরমুখো মানুষদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাছ থেকে না দেখলে বোঝা কঠিন। যেন এক মানবিক বিপর্যয়।
৩ শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা থেকে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা যাচ্ছেন কারওয়ান বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী কাদের মিয়া। গাবতলী থেকে বাসে রওনা হয়েছেন রাত ১১টায়। সেই গাড়ি সকাল ৮টায় যানজটে আটকে আছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত এলেঙ্গায়।
৯ ঘণ্টায় মাত্র ১০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে ঢাকা থেকেই বিভিন্ন স্থানে কয়েক ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিল তাদের বাস। এখন তিনি জানেন না কখন সেতু পার হবেন আর কখন গন্তব্যে পৌঁছবেন।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/07/08/tangail_road_picture-02.jpg?itok=mEoV0UPz×tamp=1657263216)
'শুনছিলাম বিরাট রাস্তা হইছে, আগের সেই দিন নাকি আর নাই, জ্যাম হবে না কোথাও। কিন্তু এ কী অবস্থা। সারা রাস্তায়ই যানজট। প্রচণ্ড গরমে সারারাত জেগে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাচ্চারা। সঙ্গে খাবার নেই, পানি নেই, টয়লেট করার উপায় নেই। আমার স্ত্রীরও খুব কষ্ট হচ্ছে', দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন কাদের।
'কী করব বলেন? বাড়িতে বুড়ো বাবা-মা আছেন, ভাই-বোন—আত্মীয় স্বজন আছেন। ঈদেই তো শুধু বাড়ি যাই। সারাবছর তো আর যাওয়া হয় না। তবে ভোগান্তি ছাড়া কোনো ঈদেই টাঙ্গাইলের এই রাস্তা পার হতে পারলাম না', যোগ করেন কাদের।
শুধু কাদের নন, উত্তরের পথে ঈদে ঘরমুখো লাখো মানুষের একই অবস্থা, একই ভোগান্তি। এর কোনো শেষ নেই।
এবার ঈদের আগে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল, উত্তরের যাত্রায় এবার কোনো ভোগান্তি হবে না। টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় এবং দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি, কোনো কাজেই দেয়নি তাদের এসব উদ্যোগ। ঈদের ৩ দিন আগে থেকেই সেতুর উভয় প্রান্তে যানজটে নাকাল যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পৌলীতে যানজটে আটকা পড়ে থাকা বগুড়াগামী মো. ইব্রাহীম নামে এক বাসযাত্রী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল রাতে গাবতলী থেকে রওনা হয়েছি, কিন্তু ১০ ঘণ্টা পরও যমুনা সেতু পার হতে পারিনি।'
রংপুরগামী যাত্রী সানোয়ার বলেন, 'এখনো ৩ ভাগের একভাগ রাস্তা যেতে পারিনি। গাড়ি একদমই চলছে না।'
বিলকিস আক্তার নামে রাজশাহীগামী এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, 'ভোগান্তির শেষ নেই, কোনো প্রকার একটু বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই। খুব কষ্টে বাড়ি যাচ্ছি।'
শুধু টাঙ্গাইলে সেতুর পূর্ব প্রান্তেই নয়, একই অবস্থা পশ্চিম প্রান্ত সিরাজগঞ্জেও।
রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাসচালক রোকন বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রওনা হয়ে আজ সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে এসে আটকে আছি। কখন ঢাকা পৌঁছব জানি না।'
উত্তরের জেলাগুলো থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়া কোরবানীর পশুবাহী ট্রাকগুলো যানজটে আটকা থাকায় আতঙ্কে সময় পার করছেন গরু ব্যবসায়ীরা।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/07/08/tangail-1.jpg?itok=9cEJGLXv×tamp=1657263216)
হানিফ নামে সিরাজগঞ্জের এক গরু ব্যবসায়ী জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যানজটে। কখন ঢাকা পৌঁছাতে পারবেন বুঝতে পারছেন না। এদিকে প্রচণ্ড গরমে গরুগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। গরুগুলোর কিছু হলে তার আর কোনো গতি থাকবে না।
মহাসড়কে দায়িত্বপালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবশ্য এই যানজটের জন্য মহাসড়কের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি গাড়ি চলাচল এবং আনফিট গরুর ট্রাককে দায়ী করেছেন।
তারা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল দিতে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত লেগে যায়। আর এ সময়ের মধ্যে অনেক গাড়ি এসে জমে দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। সেতুর ওপর যাতে যানজট হতে না পারে সেজন্য এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায় টোল আদায়।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে বৃহস্পতিবারের জ্যামের অন্যতম কারণ ছিল রাস্তায় আনফিট গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া। গতকাল রাত থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যানজটে আটকে থাকা হাজার হাজার গাড়ি একবারে টাঙ্গাইলের মহাসড়কে ঢুকে পড়ায় এবং এলেঙ্গার পর ৪ লেন থেকে ২ লেন সেতু পূর্ব সংযোগ সড়কে প্রবেশ করায় আজ এই পরিস্থিতি হয়েছে।'
'আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আশা করছি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে', যোগ করেন তিনি।
এদিকে, প্রতি ঈদেই ঘরে ফেরা মানুষের এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ কমাতে ঈদের আগের কয়েকদিন বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন অনেক যাত্রী।
'মাত্র কয়েক কোটি টাকা টোলের জন্য লাখো মানুষের এমন ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না', বলেন মাসুদ পারভেজ নামে এক যাত্রী।
Comments