সবার চোখ কুমিল্লা ও নির্বাচন কমিশনের দিকে

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার মধ্যরাতে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিজেদের সর্বোচ্চটাই দিয়েছেন প্রার্থীরা।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে কুমিল্লা শহর। ছবি: রাশেদ সুমন

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার মধ্যরাতে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিজেদের সর্বোচ্চটাই দিয়েছেন প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কুর চেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারেন বলে মনে করছেন অনেক ভোটার। কেননা, সাক্কু দলীয় সমর্থন ছাড়াই নির্বাচন করছেন।

সাবেক বিএনপি নেতা সাক্কু কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সদ্য সাবেক মেয়র। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ভোটাররা আরও বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কু নির্বাচনে জেতার জন্য জনগণের সরকারবিরোধী মনোভাবকে পুঁজি করতে পারেন। ফলে, একটি বড় অংশের ভোট সাক্কুর পক্ষে পরতে পারে।

আগামীকাল অনুষ্ঠেয় এই সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশন পরিচালিত প্রথম বড় নির্বাচন। এই নির্বাচনে কমিশন কীভাবে দায়িত্ব পালন করে, তা দেখার অপেক্ষায় সব রাজনৈতিক দল।

আগামীকালের সিসিসি নির্বাচনে এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারীসহ মোট ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করবে।

দ্য ডেইলি স্টারকে বেশ কয়েকজন ভোটার ও সুশীল সমাজের সদস্য বলেন, ২ বারের মেয়র সাক্কুর জন্য এবার পরিস্থিতি আরও কঠিন। কেননা, তিনি বিএনপির সমর্থন পাননি। এ ছাড়াও, আরেকজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সারও সাক্কুর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন  যে সাক্কু আসলে 'আওয়ামী লীগের লোক'।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রিফাত স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তবে, তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমার নেতৃত্বে দলের একটি অংশের সমর্থন পাচ্ছেন না।

২০১২ সালের প্রথম সিসিসি নির্বাচনে সাক্কু আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফজালকে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন। আফজলের মেয়ে সীমা ২০১৭ সালে সাক্কুর কাছে প্রায় ১০ হাজার ভোটে পরাজিত হন।

সংসদ সদস্য বাহার ও তার সমর্থকরা ২০১২ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেননি। ৫ বছর পর বাহারের সমর্থকরা দলীয় প্রার্থী সীমার পক্ষে প্রচারণা থেকে বিরত ছিলেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লা ইউনিটের সভাপতি আলমগীর খান বলেন, 'ঐতিহ্যগতভাবে কুমিল্লা শহরের ভোটাররা প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও ক্যারিশমার প্রতি আকৃষ্ট হন। এ বার দলের সমর্থনও একটা বিষয় হবে।'

তিনি বলেন, ভোটাররা গত ১৫ বছরে মেয়র সাক্কুর কাজ মূল্যায়ন করবেন।

তিনি আরও বলেন, রিফাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দলীয় কোন্দল  নিয়ন্ত্রণে রাখা।

গত ২৭ মে থেকে শুরু হওয়া এই নির্বাচনী প্রচারণায় শহরের বাসিন্দারা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হননি।

গতকাল শহরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ নেই।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কুমিল্লার সাবেক সাধারণ সম্পাদক  খায়রুল আজিম শিমুল বলেন, 'ভোটাররা, বিশেষ করে প্রবীণরা ইভিএম নিয়ে উদ্বিগ্ন। মেশিনটি ব্যবহার করতে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন।'

তিনি বলেন, মনে হচ্ছে ইসি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আগ্রহী।

স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা শাহিন সুলতানা কাকলি বলেন, তিনি আগামীকাল ভোট দিতে যাবেন না। কারণ, মেয়র প্রার্থীদের কেউই জনগণের সেবা করতে সক্ষম নন।

তিনি বলেন, 'সার্বিকভাবে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো, কিন্তু আমি ভোট দেব না।'

প্রচারণার সময় শেষ

গতকাল মেয়র প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। তবে, সাক্কু প্রচারণা থেকে বিরত ছিলেন এবং শেষ সময়ের কৌশল নিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

নগরীর বল্লভপুর এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে রিফাত অভিযোগ করেন, সাক্কু দুর্নীতিবাজ। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে সাক্কুর দুর্নীতিগুলো প্রকাশ করবেন।

সাক্কু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি মেয়র হিসেবে গৃহীত প্রায় সব প্রকল্প সম্পন্ন করেছেন।

প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করতেই আবার আমার নির্বাচিত হওয়া দরকার।'

নিজামউদ্দিন কায়সার গতকাল নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন, বহিরাগত ও অপরাধীরা শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর ফলে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। কমিশনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'পরিবেশ খুবই ভালো। বিজিবি ইতোমধ্যে শহরে টহল দিচ্ছে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

8h ago