ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৭ বছরেও যুক্ত হয়নি নতুন ট্রেন

ছবিটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোচ সংকটের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে গত ৭ বছরেও নতুন কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন যুক্ত হয়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এই রুটে যোগ হয়েছিল আন্তঃনগর ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস।

১৯৮৮ সালে পণ্য পরিবহনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৪টি ট্রেন যুক্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকে নতুন কোনো ট্রেন যুক্ত হয়নি দেশের ব্যস্ততম এ রুটে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীবাহী ৮টি ট্রেন প্রতিদিন একবার করে আসা-যাওয়া করছে। এই আটটি ট্রেনে সিটের সংখ্যা ৫ হাজার ২৩৫টি। এর মধ্যে ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। সেগুলো হচ্ছে- সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস ও তূর্ণা এক্সপ্রেস। এছাড়া, এই রুটে ২টি মেইল ট্রেন ঢাকা মেইল, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চলাচল করে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের স্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফেরত যান। আমরা তাদের টিকিট দিতে পারি না।'

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনছেন যাত্রীরা। ঢাকায় যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট কিনতে এসেছেন আরাফাত সজীব। আরাফাত বলেন, 'বাসের তুলনায় ট্রেনে ভ্রমণে খরচ কম। তাই ট্রেনের টিকিট কিনতে এসেছি। কিন্তু, কোনো টিকিট পেলাম না, কাউন্টার থেকে জানাল সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।'

বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) বাণিজ্যিক বিভাগের হিসাব মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য পরিবহন থেকে ১৪৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু, চাহিদা সত্ত্বেও ইঞ্জিন-সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

সড়কপথের চেয়ে রেলপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম, তাই আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ট্রেনের চাহিদা আছে ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু, মাত্র ৪টি ট্রেন দিয়ে কনটেইনার পরিবহন করছে রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ালে পণ্য পরিবহন খাত থেকে আয় বাড়ানো সম্ভব বলে জানান বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের (সিজিপিওয়াই) প্রধান ইয়ার্ড মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, 'পণ্য পরিবহনে চাহিদা আছে, কিন্তু ইঞ্জিন সংকটের কারণে নতুন ট্রেন যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া, চাহিদা অনুযায়ী ট্রেন না থাকায় বন্দরের ইয়ার্ডে পণ্যের জট লেগে যায়।'

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদা বলেন, 'এই রুটে আরও ট্রেন দরকার যা আমদানি-রপ্তানির গতি বাড়াবে।'

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুটটি লাভজনক। এ রুটে আরও ট্রেনের চাহিদা আছে। কিন্তু, কোচ সংকটের কারণে গত ৭ বছরে আমাদের পক্ষে যাত্রীবাহী নতুন ট্রেন যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

'আমরা এই রুটে নতুন ট্রেন চালুর জন্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দিয়েছি। ইতোমধ্যে নতুন ট্রেন যুক্ত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। কিন্তু, নতুন কোচ আমদানি না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চালু সম্ভব নয়। বর্তমানে যাত্রীবাহী যে ৮টি ট্রেন চলাচল করছে সেগুলোতেও কোচ সংকট আছে,' বলেনি তিনি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেললাইন পরিচালনা করে ২ অঞ্চলের মাধ্যমে। একটি হলো পূর্বাঞ্চল, আরেকটি হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল। পূর্বাঞ্চলের আওতায় ১ হাজার ২৭৯ কিলোমিটার ও পশ্চিমাঞ্চলের আওতায় ১ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার রেলপথ আছে। রেলপথের সংখ্যা কম হলেও পশ্চিমাঞ্চলে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন আছে। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা হচ্ছে ২৪ জোড়া।

Comments

The Daily Star  | English

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

1h ago