বাম্পার ফলনের পরও বাড়ছে আলুর দাম

ফাইল ফটো

এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হলেও তার সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। আলুর দাম পৌঁছেছে গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থানে মজুদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও বন্যার কারণে সবজির সরবরাহ কমে উচ্চ চাহিদা তৈরি হওয়ায় আলুর দাম বেড়েছে।

তারা একই সঙ্গে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া, পরিবহণ ও শ্রমিকের খরচ বৃদ্ধিতেও এর জন্য দায়ী করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১ কোটি ১০ লাখ টন আলুর উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে গত মে মাস পর্যন্ত ৭৬ হাজার টন রপ্তানি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, বাংলাদেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন। তারা তাদের ৪০০টি স্টোরেজে মাত্র ৪০ লাখ টন সংরক্ষণ করতে পারেন। এর মধ্যে ৩২ লাখ টন আলু বিক্রির জন্য প্রস্তুত এবং বাকিটা বীজ হিসেবে রাখা হয়েছে।

গত ২ দশক ধরে আলু চাষ করেন রংপুর সদরের কৃষক নুরুল আমিন তালুকদার। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরেজের আলু বিক্রি শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, 'সাধারণত কৃষক জুন পর্যন্ত তাদের নিজস্ব মজুদ থেকে আলু বিক্রি করেন। এ বছর, মে মাসের মধ্যে তাদের সেই মজুদ শেষ হয়ে গেছে।'

রংপুরের সাতমাথার কৃষক ইউসুফ আলী ৮ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। দাম সন্তোষজনক না হওয়ায় তিনি ১৮০ বস্তা আলু কোল্ড স্টোরেজে এবং বাকিটা নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন।

তবে তার মজুদের প্রায় অর্ধেক আলু পোকার আক্রমণে পচে গেছে জানিয়ে বলেন, 'অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু আলুগুলো বাঁচাতে পারিনি।'

এ অঞ্চলের কৃষক জানান, তাদের মধ্যে অনেকেই এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

কোল্ড স্টোরেজ থেকে বিক্রি হওয়া আলুর দাম প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকার মধ্যে হলেও রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে তা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, পরিবহন ও প্যাকিংসহ অন্যান্য বাড়তি খরচের কারণে রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছাতে গিয়ে আলুর দাম বেড়ে যায়।

ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারে এর দাম ২৮-৩০ টাকা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৮ জুন আলুর দাম কেজিতে ৩০ টাকা ছিল। সে সময় করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ মোকাবিলা করছিল দেশ। এর আগে, ২০১৮ সালে আলুর দাম ছিল ২৫ টাকা কেজি।

মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে মানুষ বেশ সমস্যায় পড়ে। এ পরিস্থিতিতে আলুর দাম আবারও বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

এ বছর উত্তরাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার কারণেও শস্যের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রাজধানীর তেজতুরী বাজার থেকে সবজি কিনছিলেন শাহিনা বেগম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব সবজির দামই কেজিতে ৬০ টাকার উপরে। শুধু আলুই সস্তা ছিল। এক সপ্তাহ আগেও ২৫ টাকায় কিনেছি। এখন বিক্রেতারা ৩৫ টাকা চাইছেন।'

রাজধানীর সবজি বিক্রেতা জনি জানান, বন্যার কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'পাইকারি বাজার থেকে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি। এখন তা ৩০ টাকা।'

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিএএমের মহাপরিচালক এ গাফফার খান জানান, কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সংরক্ষণ করা হলে আলুর ওজন কমে যায়। তাই মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, 'কৃষক এখন ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে তাদের লোকসান কমাবে এবং ভবিষ্যতে চাষে উত্সাহিত হবেন।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

4h ago