রমজানের নিত্যপণ্য: ডলার সংকটে বেড়েছে দাম

ফাইল ছবি: স্টার

রমজান মাস আসতে এখনো দুই মাস বাকি থাকলেও ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে বেড়েছে ছোলা, খেজুর ও সয়াবিন তেলের দাম।

আমদানিকারকরা বলছেন, রমজানে এই পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। এই পণ্যগুলো যেহেতু আমদানি করা হয়, ডলার সংকটের কারণে এগুলোর সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

তারা আরও বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করছেন বলেও সরবরাহে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীর ১২টি কাঁচাবাজার থেকে সংগ্রহ করা বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে প্যাকেটজাত ১ কেজি আটার দাম ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে এবং খোলা আটার দাম ৮ শতাংশ বেড়েছে।

জাত ভেদে মুগ ডালের দাম ২ থেকে ১৩ শতাংশ, ছোলার দাম ৩ শতাংশ এবং খেজুরের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে।

এক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে প্রতি কেজি খেজুরের দাম ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, মসুরের ডালের দাম ৪ থেকে ১৩ শতাংশ এবং ছোলার দাম ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়েছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি কেজি ছোলা এখন ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগের চেয়ে প্রায় ১০ টাকা বেশি।

দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খেজুরের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

খেজুর আমদানিকারক আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছরের তুলনায় এবার জাত ভেদে খেজুরের দাম ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ বেড়েছে। এর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে আমদানি শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গত কয়েক মাস ধরে দাম স্থিতিশীল থাকলেও বাংলাদেশে কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেশি।

তারা এই পরিস্থিতির জন্য ডলারের ঘাটতিকে দায়ী করেছেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভ ক্রমশ কমছে।

এ ছাড়া, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডলারের বিপরীতে ২৮ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে টাকা। এর ফলে আমদানি পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গম, খেজুর, সয়াবিন তেল ও মসুর ডালের আমদানি কমেছে।

গত তিন মাসে প্রায় ১০ দশমিক ৯৮ লাখ টন গম এবং ১ দশমিক ২৭ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়েছে।

এক বছর আগের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১১ লাখ ২৬ লাখ টন গম এবং ২ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন তেল।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'ডলারের ঘাটতির কারণে বিদেশে লেনদেন কঠিন হয়ে পড়ায় আমরা যতটা প্রয়োজন ততটা আমদানি করতে পারছি না। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।'

গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জানিয়েছে, নিত্যপণ্য আমদানির লেটার অব ক্রেডিটের (এলসি) ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত করতে বলেছে যে মার্চ পর্যন্ত আটটি নিত্যপণ্য আমদানি যেন স্বাভাবিক থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার বলেন, 'আগেও এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি।'

এ ছাড়া, আমদানির জন্য এখন এলসি খোলা হলেও রমজানের আগে পণ্য আসবে না বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের বলেন, যারা নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কঠোর অভিযান শুরু করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshis worry amid US immigration crackdown

The United States has deported at least 31 Bangladeshis after President Donald Trump took a tough immigration policy.

5h ago