চাঁপাইনবাবগঞ্জে বড় গাছে আম কম, ছোট গাছে বেশি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর বড় গাছগুলোতে মুকুল কম হওয়ায় আম ধরেছে কম, তবে ছোট গাছে মুকুল বেশি হওয়ায় আমও ধরেছে বেশি। এবার বড় গাছের বাগান মালিকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
কৃষি বিভাগ কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, বড় বাগানগুলোতে ৭০-৮০ বছর বা তার চেয়েও বেশী বয়সী গাছ থাকায় আর আগের মতো ফলন দিতে পারছে না।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর গ্রামের বাগান মালিক হাসান আল সাদী পলাশ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বাগান। এই বাগানের বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। এখানে ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাতসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছ রয়েছে। গাছ আছে দেড় শতাধিক। গত বছর উৎপাদন ভালো হলেও আমের বাজার মূল্য ছিল কম। তিনি এই বাগানে উৎপাদিত আম ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। যা মোটেও সন্তোষজনক নয়।
নিজের বাগানের পাশাপাশি তিনি অন্যের বাগানও লিজ নেন।
হাসান আল সাদী পলাশ জানান, এ বছর তার বাগানসহ শিবগঞ্জ এলাকায় বড় গাছে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ মুকুল এসেছে। যা গত বছরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অর্ধেকরও কম।
'এ কারণে নতুন বাগান লিজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আগামীতেও আর লিজ নিতে চাই না', বলেন তিনি।
এই বাগান মালিক আরও বলেন, 'উৎপাদন ও শ্রমিক খরচ দিয়ে আমাদের মতো মানুষের আম বাগানের ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন। এ বছর আমের ফলন একেবারে কম হওয়ায় বাগান পরিচর্যার টাকাও উঠবে না।'
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আজাইপুর মহল্লার আব্দুল কাইউম শহরের গনকা এলাকার একটি বাগান ২ বছরের জন্য ৫ লাখ টাকায় লিজ নিয়েছেন। ওই বাগানে ১২০টি ভিন্ন জাতের আম গাছ আছে। শহরের অন্যতম পুরাতন এই বাগানের গাছে মুকুল কম হয়েছে। ফলে আমও হয়েছে কম।
তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, গাছে মুকুল আশানুরূপ না হওয়ায় ও ফল কম ধরায় তিনি হতাশ। এই বাগান থেকে পুঁজি লগ্নির অর্ধেক টাকা তো দূরের কথা ৪ ভাগের ১ ভাগ টাকাও উঠে আসবে না। গত বছর মুকুল মোটামুটি ভালো এসেছিল এবং ফলনও হয়েছিল ভালো। তা দেখেই তিনি এবার ২ বছরের জন্য বাগান লিজ নেন।
সদর উপজেলার চটিগ্রামের আফজাল হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, তার সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে ৪০০ আম্রপালি ও ১০০ বারি-৪ জাতের আম গাছ আছে। মুকুল এসেছে প্রায় শতভাগ এবং ফলনও ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলের আশা করছেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আম মূলত অল্টারনেট বিয়ারিং। বড় গাছে সাধারণত এক বছর মুকুল ভালো আসে (অনইয়ার), পরের বছর মুকুল কম হয় (অফইয়ার)। সেই কারণে এ বছর গত বছরের তুলনায় বড় গাছে মুকুল কম হওয়ায় আম কম হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'পুরনো বাগানগুলোর আম গাছের বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে আর আগের মতো আম উৎপাদন করতে পারছে না। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী গাছে মুকুল বেশি হওয়ায় এবং আম ধরায় খাটো জাতের বাগান মালিকরা লাভবান হচ্ছেন।'
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোট গাছ বিশেষ করে আম্রপালি ও বারি উদ্ভাবিত জাতের আম গাছে মুকুল এসেছে বেশি, আমও ধরেছে বেশি। এই অঞ্চলের পুরনো বাগানগুলোর গাছ ৭০ বা ৮০ বছরের অধিক। স্বাভাবিক কারণেই এই গাছগুলোর প্রাণশক্তি কম। মুকুল ও ফল আসলে খাবার লাগে, সেটা পাচ্ছে কম। বয়স্ক গাছ সরিয়ে নতুন গাছ লাগাতে হবে। যদি কৃষক লাভ করতে চান, তবে বারি উদ্ভাবিত জাতের আম গাছগুলো লাগাতে হবে।'
'আর মধ্যবয়সী গাছ বিশেষ করে ৩০-৪০ বয়সী গাছগুলোকে এপ্রিল–মে মাসে টপ ওয়ার্কিং (ডাল কেটে ফেলা) করলে নতুন ডাল ও পাতা গজাবে। এতে মুকুল আসবে বেশি, আমের ফল আসবে বেশি। কৃষকরা লাভবান হবেন', যোগ করেন তিনি।
এই বিজ্ঞানীও আরও বলেন, 'ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত অল্টারনেট বিয়ারিং হয়। তবে ছোট গাছে প্রতি বছর মুকুল ও ফল আসে বেশি।'
উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এবার ৮২ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। এ বছর ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৫৫ লাখ আম গাছ রয়েছে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন। গত বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬০ হাজার টন।
Comments