আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে ধীরগতি, তীব্র যানজটে নাকাল নোয়াখালীবাসী

ছবি: স্টার

নোয়াখালীর সোনাপুর-বেগমগঞ্জের চৌমুহনী চৌরাস্তা আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪ লেনের কাজে ধীরগতির কারণে প্রতিদিন তীব্র যানজটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নোয়াখালীবাসী।

গত ৫ বছরে সোনাপুর থেকে বেগমগঞ্জের একলাসপুর পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ২ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই সড়কের দত্তেরহাট থেকে গাবুয়া পর্যন্ত লেগে থাকে তীব্র যানজট।

যানজটের কারণে কর্মমুখী মানুষ, রোগী ও শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। জেলা শহরের ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও নাগরিক জীবনেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

সেইসঙ্গে যানজট নিরসনে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশের কার্যকরী কোনো ভূমিকা না থাকায় দুর্ভোগ কমছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর-বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪ লেনের সাড়ে ৮ কিলোমিটার নির্মাণের কাজ পেয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লি.। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। এরপর ২ বার কাজ শেষ করার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি তারা।

ছবি: স্টার

সোনাপুর জিরো পয়েন্ট থেকে বেগমগঞ্জের একলাসপুর পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে গত ৫ বছরে কার্পেটিং করা হয়েছে মাত্র ২ কিলোমিটার। সড়কের বাকি অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শুকনা মৌসুমে এই ভাঙা রাস্তায় চলা যেমন দুষ্কর, তেমনি বর্ষায় গর্তগুলোতে পানি জমে এই পথে চলা ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

সাধারণ মানুষ ও পৌর বাজারের ব্যবসায়ীরা এই যানজটের জন্য স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অবহেলাকেও দায়ী করেছেন।

ঠিকাদার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বাবু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোনাপুর থেকে মাইজদী আসতে ১০ মিনিটের রাস্তা। অথচ, এখন ২ ঘণ্টায় আসতে পারি না।'

সোনাপুর-ঢাকা রুটের বাস চালক আশরাফ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'ট্রাফিক পুলিশের গাফেলতির কারণে প্রতিদিন তীব্র যানজট লেগেই থাকে।'

কুমিল্লা-সোনাপুর রুটের নিয়মিত যাত্রী তারেক হোসেন বলেন, 'কুমিল্লা থেকে মাইজদী যেতে প্রায় ২ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু চৌরাস্তা থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টারও বেশি।'

একই অভিযোগ করে কাপড় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম বলেন, 'তীব্র গরমে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীরা কষ্ট পাচ্ছেন।'

এই পথ পেরিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

এই সড়কের কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করার দাবিতে গত ১১ জুন মাইজদী টাউন হল মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে 'নাগরিক অধিকার আন্দোলন' নামের একটি সংগঠন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

ছবি: স্টার

নির্মাণ কাজে দেরি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের অধীনে সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২ কিলোমিটার কার্পেটিং করা হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বরের আগেই বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।

পরিবহন চালক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে নোয়াখালী শহর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই প্রশাসন) মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, 'যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমি নিজেও দিনের বেশিরভাগ সময় সড়কে থাকি। নির্মাণাধীন সড়কটির ২ পাশে ভাঙা এবং সড়কের ওপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে তাতে পানি জমে থাকে। ফলে গাড়ি চলাচলের গতি থাকে কম। এই কারণেই যানজট লেগে থাকে।'

'এ ছাড়াও, এই সড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, গাড়ি চালকদের মধ্যে আগে যাওয়ার প্রবণতা, উল্টোপথে গাড়ি চালানোর ফলেই এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

সওজ নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্যা প্রতিনিয়ত যানজট ও সড়ক নির্মাণে ধীরগতির ফলে জনভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, 'আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।'

কাজ শেষ হতে এত বেশি সময় লাগার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'ভূমি অধিগ্রহণ ও বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরে দেরী হওয়ায় কাজ শেষ করতে বেশি সময় লেগেছে। কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা একাধিকবার ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

3h ago