অযত্ন-অবহেলায় বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিনের স্মৃতিস্তম্ভ

বেগমগঞ্জে অযত্ন, অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মো. রুহুল আমিনের স্মৃতিস্তম্ভের বেহাল দশা। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে কর্তৃপক্ষের অযত্ন, অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবে বেহাল দশায় পড়ে আছে জেলার কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিনের স্মৃতিস্তম্ভ।

স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরার জন্য ২০০০ সালে বেগমগঞ্জের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করেন। এর দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় চৌমুহনী পৌরসভাকে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অযত্নে স্মৃতিস্তম্ভটি এখন সৌন্দর্য হারিয়েছে। আশেপাশে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ।স্মৃতিস্তম্ভ ঢেকে গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার পোস্টার ও ব্যানারে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।

বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙ্গালী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নোয়াখালীর গৌরব শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতি রক্ষার্থে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও তা তদারকির অভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। রাতে ঝলমলে আলো আর পানির ফোয়ারার ব্যবস্থা করা হলেও লাইট ও পানির মোটর চুরি হয়ে গেছে। নেশাগ্রস্ত লোকজনের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে এটি।'

তিনি দ্রুত স্মৃতিস্তম্ভটি পুননির্মাণ ও এর রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানান।  

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) অতিরিক্ত সচিব এবং বেগমগঞ্জের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০০০ সালে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর জানতে পারলাম নোয়াখালীর কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে নোয়াখালীর অনেকেই চেনেন না। বিষয়টি আমাকে আহত করে। এরপর আমি বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় রুহুল আমিন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও এটিকে দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিই। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভাস্কর্য এবং রুহুল আমিনের ছবি সংযুক্ত করা হয়। রাতে যেন পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীরা রুহুল আমিনের ছবি দেখতে পান সেজন্য স্মৃতিস্তম্ভের ৪ পাশে লাইটিং ও পানির ফোয়ারাও নির্মাণ করা হয়।'

তিনি বলেন, 'বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিন দেশের সূর্য সন্তান। তার স্মৃতিস্তম্ভ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে রুহুল আমিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে।'

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান স্মৃতিস্তম্ভটির বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বলেন, 'ইতোমধ্যে আমি ও নোয়াখালী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্মৃতিস্তম্ভটি পরিদর্শন করেছি। নব-নির্বাচিত নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু দায়িত্ব গ্রহণ করার পর স্মৃতিস্তম্ভটি আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করা হবে।'   

বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. আজহার পাটোয়ারী ও মা জুলেখা খাতুন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীতে শহীদ হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students begin mass hunger strike

Approximately 5,000 current and former students have joined the protest

3h ago