সভায় ইউপি চেয়ারম্যানকে মারধর, প্যানেল মেয়র গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলকে মারধরের অভিযোগে মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালে এই মারধরের ঘটনা ঘটে।
মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'রাত সাড়ে ৮টার দিকে মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজার বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মারধর ও হত্যাচেষ্টার লিখিত অভিযোগ করেন ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাত পৌনে ৯টার দিকে মামলা রুজু করা হয়েছে।'
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, জেলা যুবলীগের আহবায়ক রাজার সাথে তার পূর্ব বিরোধ ছিল। আজ সভা চলাকালে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল তার ইউনিয়নের উন্নয়নের কথা তুলে ধরার সময় রাজা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। চেয়ারম্যান এর প্রতিবাদ করলে রাজা তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন।
চেয়ারম্যান জলিল বলেন, 'এছাড়া তিনি আমাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। উপস্থিত কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।'
সভায় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল ১০টায় সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় শুরু হয়। সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাফিল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনসহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান এবং ইউপি চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বেলা দেড়টার দিকে বিরতির সময় প্যানেল মেয়র ও যুবলীগের আহবায়ক আবদুর রাজ্জাক রাজার সঙ্গে সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জলিলের মধ্যে তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে প্যানেল মেয়র সভায় উপস্থিত লোকজনের সামনেই ইউপি চেয়ারম্যান জলিলকে চড়-থাপ্পড় দেন।
পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ প্যানেল মেয়রকে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সভায় উপস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান ইসরাফিল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারি এমন একটি সভায় একজন প্রতিনিধি হয়ে অপর জনপ্রতিনিধির গায়ে হাত তুলতে পারেন না।'
ইউএনও মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, 'সভাশেষে সবাই দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে খবর দেই।'
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ইউনিয়নে ক্যাবল ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা নেওয়া বন্ধ করার পর থেকে প্যানেল মেয়র আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এর জের ধরে মাসিক সমন্বয় সভায় সবার সামনে আমাকে তিনি চড়-থাপ্পড় দেন।'
পুলিশ হেফাজতে থাকা মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক রাজা বলেন, 'সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতিবাচক কথা বলায় আমি চেয়ারম্যানকে সর্তক করেছি। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকে অপমানজনক কথা বলেন। এর প্রতিবাদ করায় ইউপি চেয়ারম্যান উল্টো আমাকে চড়-থাপ্পড় দেন। আমি তাকে মারধর করিনি।'
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইউএনওর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে প্যানেল মেয়রকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বাদি হয়ে পৌর প্যানেল মেয়র আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।'
মামলার পর হেফাজতে থাকা প্যানেল মেয়রকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
Comments