মৎস্যপ্রেমীদের এক দিন
সুস্বাস্থ্যের কথা বাদ দিলেও মাছ ছাড়া আর কোন খাবারই এতো পদের হয়না। মাছ ধরা থেকে শুরু করে মাছের বাজার সব কিছুই বাঙালির খাবারের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রূপচাঁদা বা কইয়ের ডিপ ফ্রাই যেমন, পিঁয়াজ দিয়ে মাগুরের কারিও তেমন, রসনাবিলাসের জন্য কোনটারই গুরুত্ব কম না। আর বৃষ্টির দিনে সরষে ইলিশের সাথে তো কোন কিছুরই তুলনা চলে না।
মাছের কথা উঠতেই শৈশবের কথাও মনে পড়ে অনেকের। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুকুরের পানিতে মাছের আলোড়ন অথবা জিভে লেগে থাকা মায়ের হাতে রান্না করা তাজা মাছের স্বাদ।
রাজধানীতে মাছের বাজার
ঢাকার মাছপ্রেমীদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা দেখা যায় সোয়ারিঘাট বাজারে। এখান থেকে রাজধানীর অন্যান্য বাজারগুলোতে মাছ সরবরাহ করা হয়। বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর থেকে সরাসরি মাছ আসে এই বাজারে। ফলে সোয়ারিঘাট থেকে কেনা মাছ যেমনই সুস্বাদু দেখতেও তেমন তাজা।
এখানে প্রতি কেজি পাবদা পাওয়া যাবে ৮০০ টাকায়। মেঘনায় ধরা ১০ কেজি সাইজের রুই প্রতি কেজিতে পড়বে ৬০০ টাকা।
রাজধানীতে রাস্তার পাশের মাছের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সায়দাবাদে। স্বাদু পানি ও সাগরের প্রায় সব ধরনের মাছেরই দেখা মিলবে কারওয়ানবাজারে। এখানে মাঝারি আকারের কেজি প্রতি তেলাপিয়া পাওয়া যাবে ১৫০ টাকায়, সরপুটি ২০০ টাকার আশপাশে আর আকার ভেদে চিংড়ি পাওয়া যবে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। সামুদ্রিক কোরাল বা রূপচাঁদাও বেশ উঁচু দরে বিক্রি হয় এখানে। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট, টাউন হল মার্কেট ও নিউ মার্কেটেও মাছ ভক্তদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে এই বাজারগুলো থেকে সেরা মাছটা কিনতে হলে খুব সকাল সকাল যেতে হবে।
বাংলাদেশ ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের মাছ
মানসম্মত মাছের জন্য বাংলাদেশ ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সুনাম রয়েছে। কারওয়ান বাজার, মতিঝিল ছাড়াও আরো কয়েকটি জায়গায় এদের শো-রুম আছে। ধরার সাথে সাথে এরা মাছে বরফ দিয়ে দেয়। ফলে মানে ও স্বাদে অটুট থাকে মাছ। সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে এরা মাছ নিয়ে আসে। সামুদ্রিক মাছের ভক্তদের জন্য বিশাল কালেকশন রয়েছে এদের।
রেস্টুরেন্টের খোঁজ-খবর
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকায় বাড়ছে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা। মাছ ভক্তদের কথা মাথায় রেখে রেস্টুরেন্টগুলোও নানা রকম ডিশ অফার করছে। ফিশ অ্যান্ড কোঃ, ম্যানহাটন ফিশ মার্কেট এদিক থেকে রসনাবিলাসীদের তীর্থস্থানের মতো। এদের মাছের পদ স্বাদে যেমন তেমনি দেখতেও আকর্ষণীয়। বিদেশি স্যামন মাছ থেকে শুরু করে দেশি চিংড়ি সবগুলোরই পোচ, গ্রিল, বেক এমনকি আগুনে ঝলসানো মাছও পাওয়া যাবে এখানে। দেশি ঐতিহ্যের সাথে বিদেশি স্বাদেরও সম্মিলন ঘটাচ্ছে এই রেস্টুরেন্টগুলো।
দেশি মাছের অবস্থা
এ বছর রূপালি শস্য ইলিশ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়লেও হুমকির মুখে রয়েছে আমাদের মাছের প্রতি ভালোবাসা। ময়লা আবর্জনা আর দূষণে দেশের নদীগুলোর বেহাল দশা। বিশালাকার বোয়াল বা ক্ষুদে কাচকির এখন দেখা মেলা ভার। ভালো মাছের প্রায় অর্ধেকই এখন রপ্তানি হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। কিন্তু মাছে যার মন মজে সে ঠিকই কোন না কোন উপায় বের করে ফেলে।
Comments