মুক্তচিন্তার পথিক: মুস্তাফা মনোয়ার

মুস্তাফা মনোয়ার। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন মুস্তাফা মনোয়ার।

বাংলাদেশের 'পাপেটম্যান' হিসেবে পরিচিত শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের অগ্রগামী পথপ্রদর্শক। ১৯৩৫ সালে জন্ম নেওয়া এই প্রতিভাবান শিল্পী চারুকলার জগতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছেন। পাপেট শিল্পী, চিত্রশিল্পী, পরিচালক, টিভি অনুষ্ঠানের প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার হিসাবে বৈচিত্র্যময় দক্ষতার সঙ্গে তিনি সৃজনশীল শিল্পের নানাক্ষেত্রে নিজেকে একজন অনন্য ও অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

শৈশব থেকেই মুস্তাফা মনোয়ার বিশ্বাস করতেন যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য উপযুক্ত হাতিয়ার হলো শিল্প। এ বিশ্বাস তার কাজেও প্রতিফলিত হতো। ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আঁকা কার্টুনের জের ধরে তাকে সাময়িকভাবে কারারুদ্ধ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাপেটশিল্পী হিসেবে মূল্যবান অবদান রাখেন। পশ্চিম বাংলার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মনোবল বাড়ানোর জন্য তিনি তার দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার করেন। আয়োজন করেন পাপেট প্রদর্শনীর। 'আগাছা', 'রাক্ষস' ও 'একজন সাহসী কৃষক' সহ তার বিখ্যাত পাপেট শোগুলো দর্শকদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং অনেক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছিল।

মুস্তাফা মনোয়ার তার কর্মজীবন শুরু করেন প্রভাষক হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি সদ্য চালু হওয়া পাকিস্তান টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রযোজনার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বিটিভির কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই শিশু-কিশোরদের জন্য নির্মিত অনুষ্ঠানের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয় এবং এসব জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্রযোজনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মুস্তাফা মনোয়ার। ১৯৭৬ সালে বিটিভির জাতীয় টেলিভিশন প্রতিযোগিতা 'নতুন কুঁড়ি' শুরুর পেছনেও তার অবদান অনস্বীকার্য।

মুস্তফা মনোয়ার পাপেট শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য লোককাহিনী সংরক্ষণ ও শিশুদের গল্পগুলো পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনিই জনপ্রিয় ও কালজয়ী পাপেট চরিত্র পারুল, বাঘা ও মিনি'র নেপথ্যের সৃজনশীল শক্তি। এ চরিত্রগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিশুদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে।

বিটিভির জন্য তিনি 'রক্তকরবী' এবং 'মুখরা রমণী বশীকরণ' এর চিত্রনাট্য তৈরি করেন এবং প্রযোজনা করেন। এই নাটকগুলো ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের গ্রানাডা টিভি'র 'টিভি নাটকের বৈশ্বিক ইতিহাস' অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনীত হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টার ব্যক্তি মুস্তাফা মনোয়ার ও তার চিরস্থায়ী কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। তার জীবন ও উদ্যোগ আরও মুক্ত ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব গঠনে সৃজনশীলতার শক্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

19m ago