কৃষকের থেকে গম সংগ্রহের সময়সীমা বাড়িয়েছে ভারত

ছবি: সংগৃহীত

উৎপাদন ঘাটতির মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে রপ্তানি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে এবং দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।

গম উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ক্রয় প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে বলেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি ফুড করপোরেশনকে গম সংগ্রহ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড কনজ্যুমার বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

আজ রোববার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের সচিব সুধাংশু পাণ্ডে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যজুড়ে এ মাসের মাঝামাঝি সরকারি পর্যায়ে গম সংগ্রহ শেষ হওয়ার কথা ছিল বলে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

গত ১৪ মে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার। তবে রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যে ইস্যু করা ঋণপত্রের বিপরীতে গম রপ্তানি এবং প্রতিবেশী ও দরিদ্র দেশে রপ্তানির বিষয়ে শিথিলতার কথা বলা হয়।

এ ঘোষণার ২ দিনের মাথায় দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে গম সংগ্রহের সময়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলো।

সুধাংশু পাণ্ডে জানান, প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চাহিদা অনুযায়ী গম রপ্তানির প্রতিশ্রুতি রাখতে সংগ্রহের সময়সীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কাজে আসবে।

তিনি বলেন, 'গম রপ্তানি সীমিত করে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে এর দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং ভারতসহ যেসব দেশের ঘাটতি আছে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ভারত একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী দেশ এবং অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তিকে ভারত সম্মান করে।'

তিনি আরও বলেন, শুধু সরকারি প্রক্রিয়ায় গম রপ্তানি চালু রাখার লক্ষ্য হচ্ছে 'আমাদের প্রতিবেশী এবং খাদ্য ঘাটতি আছে এমন দেশগুলোর প্রকৃত চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা'।

তার মতে, ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো 'গমের বাজারকে একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া।'

'আমরা চাই না যে গম অনিয়ন্ত্রিতভাবে (ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে) এমন জায়গায় যাক, যেখানে এটি মজুদ হতে পারে বা এর কারণে দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য চাহিদা পূরণ ব্যাহত হয়। সেজন্য সরকারি প্রক্রিয়া চালু রাখা হয়েছে,' যোগ করেন সচিব সুধাংশু।

রাজ্য সরকারগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গম ক্রয়ের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান গম উৎপাদনকারী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, বিহার ও রাজস্থানে ২০২২-২৩ অর্থবছরের রবি বিপণন মৌসুমে গম সংগ্রহ চলমান আছে।

সরকারের ক্রয়মূল্য কম হওয়ায় ২০২২-২৩ সালে অবশ্য কৃষকরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি গম বিক্রি করেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ৩৬৭ লাখ টন গম সংগ্রহ করেছিল। তবে চলতি বছর ১৪ মে পর্যন্ত ১৮০ লাখ টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে।

এদিকে, গম সংগ্রহের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণও শিথিল করেছে ভারত সরকার। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় কৃষকের কাছ থেকে কুঁচকে যাওয়া এবং ভাঙা গম কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভাঙা শস্যের ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত দামেই কেনা হবে।

দেশটির ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড কনজ্যুমার বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, 'এই সিদ্ধান্ত কৃষকদের কষ্ট কমানোর পাশাপাশি এবং গম বিক্রির ঝামেলা এড়াতে সাহায্য করবে।'

এর আগে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজ্য সরকার গম কেনার ক্ষেত্রে মানে শিথিলতা চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছিল।

চলতি  বছর মার্চে ভারতের উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে অনেক ক্ষেত্রে গম কুঁচকে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই প্রতিকূল আবহাওয়া কৃষকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং তাই এই ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনার জন্য তাদের বিপদে পড়া উচিত নয়।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago