হাতির শুঁড় পর্যবেক্ষণ করে রোবটের চামড়ার উন্নয়ন
একটি নতুন গবেষণায় জানা গেছে, হাতির শুঁড়ের ওপরের দিকের শক্ত অংশ নীচের কুঁচকে যাওয়া ত্বকের চেয়ে বেশি প্রসারিত হয়। এই গবেষণা সফ্ট রোবটের জন্য কৃত্রিম চামড়া তৈরিতে সাহায্য করতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা চিড়িয়াখানায় আফ্রিকান বুশ জাতের হাতি 'কেলি' খাবারের জন্য শুঁড় এগিয়ে দিলে একটি অদ্ভুত বিষয় প্রকাশ পায়। সে সময় হাই-স্পিড ক্যামেরায় তার গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছিল।
ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, কেলির শুঁড়ের ওপরের ত্বক নীচের ত্বকের চেয়ে বেশি প্রসারিত হচ্ছে।
এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আটলান্টার জর্জিয়া টেকের মেকানিক্যাল যন্ত্রপ্রকৌশলী অ্যান্ড্রু শুলজ জানান, এ ঘটনার কোনো সরাসরি ব্যাখ্যা নেই। এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, হাতির শুঁড়ের চামড়ার পুরো অংশই একইভাবে প্রসারিত হয়। শুলজ যখন কেলি এবং আরেকটি পুরুষ হাতি শোলোকে পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া ডাটা তার সহকর্মীদের কাছে পাঠান, তখন তারা বলেছিলেন, 'আপনার ডাটা ভুল।'
কিন্তু, পরীক্ষাগারে হাতির চামড়া নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষার পর দেখা যায়, এই অদ্ভুত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
অর্থাৎ, শুঁড়ের ওপরের এবং নীচের চামড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করছে।
শুলজ এবং তার সহকর্মীরা ১৮ জুলাই বিজ্ঞান সাময়িকী 'ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস প্রসিডিংস রিপোর্টে' তাদের পাওয়া তথ্যগুলো প্রকাশ করেন।তারা জানান, হাতির শুঁড়ের ওপরের ভাঁজযুক্ত ও উঁচুনিচু, শক্ত চামড়া, নীচের দিকের মৃদু কুঁচকে যাওয়া চামড়ার তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি প্রসারিত হয়।
শুলজ বলেন, শুঁড়ের এই অতিরিক্ত প্রসারণ হাতিদের নীচের দিকে পৌঁছাতে এবং গাছের ডাল বা কাণ্ডের চারপাশে তাদের শুঁড় মুড়ে দিতে সাহায্য করে। অপরদিকে, নীচে কুঁচকানো চামড়া কোনও কিছুকে ভালো ভাবে আঁকড়ে ধরতে সাহায্য করে।
গাণিতিক মডেলিং পরীক্ষা থেকে দলটি আরও জানতে পেরেছে, শুঁড়ের প্রসারণের সঙ্গে টেলিস্কোপের কার্যক্রমের মিল রয়েছে। শুঁড়ের আগাটি প্রথমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়। পেশী নয় বরং চামড়ার মাধ্যমেই হয় প্রসারণ।
এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইতালির জেনোয়ায় অবস্থিত প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সফট রোবোটিস্ট লুসিয়া বেকাই। তিনি এ বিষয়ে বলেন, 'বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে হাতির শুঁড়ের পেশী নিয়ে গবেষণা করছেন। কিন্তু সে গবেষণায় চামড়ার বিষয়টিকে অনেকাংশে উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে নতুন গবেষণা আমাদের জানিয়েছে, হাতির দেহের সব অংশের চামড়ার গঠন একরকম নয়।'
লুসিয়া আরও বলেন, 'কৃত্রিম চামড়া প্রায়ই মানুষের চামড়ার গঠনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। কিন্তু গবেষকরা অন্যান্য প্রাণীদের কাছ থেকেও এ বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারেন। কেলি এবং শোলোর শুঁড়ের ভাঁজ এবং বলিরেখা কীভাবে কাজ করে, সেটি নিশ্চয়ই এমন তথ্য দেবে, যা সফ্ট রোবটের নকশাকে আরও উন্নত করবে৷'
অনুবাদ করেছেন আহমেদ বিন কাদের অনি
তথ্যসূত্র:
সায়েন্স নিউজ
Comments