বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তনে চরমভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে পারে বাংলাদেশ

ঈদের দিনসহ সপ্তাহজুড়ে সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা
স্টার ফাইল ফটো

বৃষ্টিপাতের সময়কাল পরিবর্তনের ফলে হিমালয় অঞ্চলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর উদাহরণ হিসেবে তারা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান মারাত্মক বন্যাকে দেখিয়েছেন।

এ বন্যার মারাত্মক প্রভাবের কারন হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিক ভারি বর্ষণ ও ভাঁটিতে পানি ব্যবস্থাপনার অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে দায়ী করেছেন তারা।

ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) মহাসাগর ও ক্রায়োস্ফিয়ারের গবেষণা বিভাগের পরিচালক অঞ্জল প্রকাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষার আগেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং উষ্ণ জলবায়ুসহ বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন করছে। এর ফলে হিমালয় অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, বিশেষ করে এ বছর সিলেট অঞ্চলে যেমন বন্যা হলো।'

তিনি বলেন, 'হিমালয় অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। এটা একরকম অনাকাঙ্ক্ষিত আবহাওয়ার দিকে যাচ্ছে। ভারতে দুই ধাপে আকস্মিক বন্যা হয়েছে। সেখানে চরম বৃষ্টিপাতে ভূমিধস হয়েছে এবং বন্যায় অনেক মানুষ মারা গেছে।'

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের জন্য একটি আর্দ্র আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে তার গবেষণায়।

গবেষণায় বলা হয়, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তনের অর্থ হলো বর্ষায় ২-৩ বার ভারী বৃষ্টিপাত হবে এবং বাকি সময় শুষ্ক থাকবে।

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের লাউরেরগড় এবং সিলেটের লালাখালে ইতোমধ্যে চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, লাউরেরগড়ে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ১৪৯৫ মিলিমিটার হলেও এবার ১৬৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। লালাখালে গড় বৃষ্টিপাত ২০৫৯ মিলিমিটার হলেও এবার ২১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় মহাসাগরের উষ্ণায়নের বিষয়ে আইপিসিসির মহাসাগর ও ক্রায়োস্ফিয়ারের প্রধান লেখক ড. রক্সি ম্যাথিউ কোল জলবায়ু মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলেন, বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী মৌসুমী বায়ু বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্দ্রতা বহন করছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতার মাত্রার সামগ্রিক বৃদ্ধি হবে।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, 'উষ্ণ বাতাস দীর্ঘ সময় বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখে। তাই, আমরা এখন যে প্রচুর বৃষ্টিপাত দেখছি তা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হতে পারে।'

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বর্ষার ধরনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ১৯৫০ এর দশক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমী বায়ুর ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো বর্ষাকাল এখন ভারী বৃষ্টি ও শুষ্ক সময়ে ভাগ হয়ে গেছে।

'তাপমাত্রার প্রতি ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য, বৃষ্টিপাতের মোট পরিমাণ ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মৌসুমী অঞ্চলে তা ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে,' রক্সি বলেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় চরম বৃষ্টিপাতের ঘটনা আনুপাতিকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, 'কয়েক বছর ধরে বন্যার প্রকৃতি বদলেছে।

'আমরা মে মাসে বর্ষার আগে বন্যা দেখেছি। এখন আমরা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আরেকটি ভয়াবহ বন্যা দেখছি।'

তিনি বলেন, 'বর্ষার শুরুতেই আমাদের বিশাল বন্যা হয়, যা কয়েক দশক আগেও ছিল না। শুধু তাই নয়, বছরের পর বছর বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে। এক মাসে প্রায় ৬-৭ বার বৃষ্টি হয়েছে।'

'আমাদের এই অপ্রত্যাশিত বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

10h ago