সিলেটে বন্যা

৬ হাজার মানুষের জন্য ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৩০ টন চাল

সিলেট নগরীর দূর্গাকুমার পাঠশালায় আশ্রয় নিয়েছেন শিশুসহ প্রায় ১৫০ জন। ছবি: দ্বোহা চৌধুরী/স্টার

সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ৪০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। ৭১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করলেও দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

দূরবর্তী অঞ্চলের বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে যেমন ত্রাণ পৌঁছায়নি, তেমনি খোদ সিলেট নগরীর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেই ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। সিলেট নগরীর ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

তবে এই ৬ হাজার মানুষের জন্য বরাদ্দে এসেছে ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৩০ টন চাল।

এসব আশ্রয়কেন্দ্র ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই খাবার সরবরাহ করলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রেই স্থানীয় কাউন্সিলররাই দেখতে যাননি বন্যাদুর্গতদের। এ অবস্থায় দুর্বিষহ অবস্থায় আছেন বেশিরভাগ বানভাসি মানুষ।

নগরীর কেন্দ্র বন্দরবাজারের দূর্গাকুমার পাঠশালায় ছড়ারপাড় এলাকায় গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্যাকবলিত প্রায় দেড়শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এই কেন্দ্রের ঠিক বিপরীতে ১০০ গজের মধ্যেই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবন এবং ৫০০ গজের মধ্যেই সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা পরিষদ।

এই কেন্দ্রে বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার স্থানীয় কাউন্সিলর একবার দেখে গেলও রোববার রাত পর্যন্ত তিনি বা সরকারি কর্মকর্তারা কেউই আসেনি। কোনো সরকারি ত্রাণ সহায়তাও পাননি তারা। তবে স্থানীয় অনেকেই তাদেরকে রান্না করা খাবার বা শুকনো খাবার দিয়েছেন কয়েকবেলা।

নগরীর ছড়ারপাড় এলাকার মো মস্তু মিয়া তার নাতি-নাতনিসহ ১৩ জনের পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এ কেন্দ্রে। তিনি বলেন, 'বৃহস্পতিবার থেকে এখানে আছি পরিবার নিয়ে। ঘরে কোমর পানি, ফিরার উপায় নাই। কিছু মানুষ মাঝে মধ্যে দুয়েকবেলা খাবার দিচ্ছেন, তাই খেয়ে আছি। সরকারি কোন সাহায্য আমরা পাইনি।'

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রহিসা বেগম বলেন, 'আমরা ৫ সন্তান নিয়ে বন্যার পানির মধ্যে এখানে এসে উঠছি। আমি কাঁচাবাজারে ফেলে দেওয়া সবজি কুড়িয়ে সংসার চালাইতাম, এখন তা বন্ধ। হাতে টাকা নেই যে কিছু কিনে রান্না করে সন্তানদের খাওয়াবো। এই অবস্থায় সরকারি কোনো সাহায্যও নাই। কিছু মানুষ দুইদিন খাবার দিছেন তা দিয়েই চলছে।'

নগরীর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন বিমান তালুকদার। তিনি বলেন, 'প্রথমে শুনেছিলাম নগরীতে বন্যার্তদের নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বড় উদ্যোগ আছে। কিন্তু একদিনেই বুঝতে পারলাম তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রেই সরকারি সাহায্য নেই। অনেক কাউন্সিলর এখন পর্যন্ত কোনো আশ্রয়কেন্দ্রেই যাননি।'

সিটি কর্পোরেশনের আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলমও জানালেন সিটি কর্পোরেশনের অসহায়ত্বের কথা।

তিনি বলেন, 'জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ টন চাল এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোনো নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় ত্রাণকেন্দ্রে চাল দিয়ে কিছু হবে না। আবার বরাদ্দ দেওয়া শুকনা খাবার দিয়েও সবাইকে সাহায্য সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বেশকিছু আশ্রয়কেন্দ্রে সড়ক যোগাযোগের উপায়ও নেই।'

'এ অবস্থায় কিছু জায়গায় কাউন্সিলররা ব্যক্তি উদ্যোগে বা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আজ সোমবার থেকে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করবো। ত্রাণ বিতরণের সুবিধার্থে যোগাযোগের জন্য ১৫টি নৌকাও কেনা হয়েছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Technical education hit by teacher shortage, falling enrolment

Bangladesh’s technical education sector is facing a slow-burning crisis, shaped by a severe shortage of teachers, poor infrastructure, and steadily declining student interest.

10h ago