মৌলভীবাজারে ৭ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি, রাত কাটছে আতঙ্কে

ছবি: স্টার

হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত শনিবার থেকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে বন্যা। ইউনিয়নের খুটাউরা, মুর্শিবাদকুরা, গগড়া, বড়ময়দান, শ্রীরামপুর, ইসলামপুর ও হাল্লা গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করে সারাদিনে এক ইঞ্চিরি মতো পানি কমলেও সন্ধায় আবার বৃষ্টি হয়ে আরও ২ ইঞ্চি পানি বেড়ে যায়।

হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের সবাই পানিবন্দি। রাত নামার পর থেকে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে আরও পানি বাড়লে কোথায় আশ্রয় নেবে। 

ছবি: স্টার

ইসলামপুর এলাকার কালা মিয়া, আলমাছ, ইসলাম উদ্দিন, আনোয়ার আলী, বিভাস দাস, বিপুল দাস, ইন্দ্রজিত  বিশ্বাস, সাদ্দাম মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পানি বেড়ে যায়। ফলে আতঙ্কে আমাদের বেশ কিছু পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করে। কয়েকটি পরিবার তাদের বাড়িতেই থেকে যায়। বাড়িঘরে পানি। রাস্তায় কোমর পানি। পুরাই জলবন্দি আমরা। 

তারা জানান, গবাদিপশু, গৃহপালিত হাঁস-মুরগি নিয়েও বিপাকে লোকজন। পানিতে তলিয়ে যাওয়া কাঁচা ঘরের বাসিন্দারা আছেন ঢেউয়ের ভয়ে। পানি বৃদ্ধির ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারে না কেউ।  

তালিমপুর ইউনিয়নের এই ৭ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ অস্বচ্ছল উল্লেখ করে সেখানকার সাবেক চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০০৪ সালে এরকম বন্যা হয়েছিল। কিন্তু ওই বছরের তুলনায় এবার অন্তত দেড় ফুট পানি বেশি হয়েছে। আমার বাড়ির সব কক্ষে এক-দেড় ফুট পানি। তালিমপুরে ৯৫ শতাংশ ঘরেই পানি উঠেছে। প্রত্যেকদিন আতঙ্কে মানুষজন ঘুমাতে পারছে না।'

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘরে পানি ওঠায় গত কয়েকদিনে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬০টি পরিবার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় ও হাকালুকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে কানুনগো বাজারের খালি ঘরেও উঠেছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের বেশিরভাগই দিনমজুর। খাদ্য সংকট আছে গ্রামের ভেতর আটকে থাকা পরিবারগুলোতেও।

হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মুর্শিবাদকুরা গ্রামের অটোরিকশাচালক সেলিম উদ্দিন বলেন, 'আমরার বাড়িটা বেশি নিচে। বাঁশ-বেতের ঘর। ঘরের মধ্যে কোমরপানি। উন্দাল (রান্নাঘর) পড়ি গেছে। তুফান দিলে ঘরটাও পড়ি যাইবো। ১০-১১ দিন আগে এইখানে আইছি। এই কয়দিন ধরি রুজি-রোজগার বন্ধ। থোরা (অল্প) চিড়া, মুড়ি, খিচুড়ি পাইছি।'

প্রশাসন থেকে ও ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক। তিনি বলেন, প্রায় শতভাগ মানুষ পানিবন্দি। কিছু মানুষ স্কুলে আসছে। অনেকেই মাচা বেঁধে ঘরে আছেন। রান্নার খুব অসুবিধা। শৌচাগারও পানির নিচে।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

12h ago