চট্টগ্রামে পাহাড় ধস: প্রাণ দিয়ে ২ সন্তানকে বাঁচালেন মা
চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা গেছেন শাহিনুর আক্তার। প্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে গেছেন যমজ কন্যা শিশুদের।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে বরিশাল ঘোনা ঝিলের পাহাড় ধসে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশীরা জানান, শাহিনুর তার ৬ মাস বয়সী ২ সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন। পাহাড় ধসে তার পিঠে পড়ে। নিজে মারা গেলেও সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
শাহিনুরের স্বামী জয়নাল আবেদীন সে সময় বড় বোনের বাড়িতে ছিলেন। পাহাড় ধসের খবর শুনে ভোরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়ি ফিরে জানতে পারেন দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী ও শ্যালিকা মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন তার শ্বশুর ও শাশুড়ি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে জয়নাল বলেন, 'শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রশাসনের লোকজন মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলছিল। আমরা এখানে বসবাস করছি প্রায় ১০ বছর। কখনো কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হইনি। ভেবেছিলাম এবারেও কিছুই হবে না। তাই আমরা বাড়ি ছেড়ে যাইনি। আমি বুঝতে পারিনি যে, সিদ্ধান্তটি আমার পরিবারের জন্য এমন মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসবে।'
পাহাড় ধসে জয়নুলের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার (৩২), শ্যালিকা মাহিনুর আক্তারের (২৪) মৃত্যু হয়। জয়নুলের শ্বশুর ফজলুল হক (৭০) ও শাশুড়ি রানু বেগম (৬০) গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে ফজলুল জানান, রাত পৌনে ৩টার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় তারা ঘুমিয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, 'আমি বিকট শব্দ শুনলাম। তারপর অনুভব করি আমার ওপর ভারী কোনো কিছু চেপে বসেছে আর আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। প্রতিবেশী এবং ফায়ার ফাইটাররা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
শাহিনুরের চাচাতো বোন রেশমা আক্তার বলেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করে তান্না ও তিন্নিকে বাঁচিয়েছে শাহিনুর।
চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের টিম লিডার উ চিং জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ২ শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে শাহিনুর ও মাহিনুরকে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. অং শুই প্রু মারমা বলেন, রানু বেগম মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। বর্তমানে তিনি নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
Comments