শিশুর ই-পাসপোর্ট করবেন যেভাবে

ছবি: ইউএনবির সৌজন্যে

বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট বা ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই থেকে বাংলাদেশের সব বয়সের নাগরিকের জন্য ই-পাসপোর্টের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। 

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তর অভিন্ন আবেদন পদ্ধতির মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকে।

তবে, বয়স ও পেশার ভিত্তিতে সেই আবেদনের নিয়মে অল্প কিছুপার্থক্য আছে। নবজাতক থেকে অনূর্ধ্ব ৬ বছর এবং তারপর থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশুদের জন্য আবেদনের প্রয়োজনীয় নথিপত্রে সামান্য তারতম্য থাকে।

অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদপত্রের অনুলিপি

হাতে লেখা বা কম্পিউটারে মুদ্রণ করা জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র এখন আর ব্যবহৃত হয় না। তাই বাচ্চাদের ই-পাসপোর্টের জন্য প্রথমে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করে নিতে হবে। জন্ম সনদটি অনলাইনে নিবন্ধিত কি না তা বাংলাদেশের জাতীয় জন্ম ও মৃত্য নিবন্ধনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। এখানে জন্ম সনদপত্রে থাকা জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা ও জন্ম তারিখ দেওয়ার পর যদি জন্ম সনদটি প্রদর্শিত হয়, তবেই তা ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য উপযুক্ত।

মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি

বাংলাদেশ পাসপোর্ট নীতিমালা অনুযায়ী ৬ থেকে ২০ বছরের নাগরিকদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি বাবা ও মায়ের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি প্রয়োজন। বা বা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে ইংরেজি বানানের সঙ্গে সন্তানের জন্ম সনদে বাবা বা মায়ের নামের বানান মিল থাকা আবশ্যক। সামান্য ভুল থাকলেও তা আগে থেকেই সংশোধন করে নিতে হবে।

থ্রি-আর ছবি (শুধু অনূর্ধ্ব ৬ বছরের শিশুদের জন্য)

ছয় বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসে ছবি তোলার সময় জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই এদের ক্ষেত্রে ল্যাবে প্রিন্ট করা থ্রি-আর সাইজের ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডের এক কপি ছবি আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় সঙ্গে করে পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু শিশুর বয়স ৬ বছরের বেশি হলে কোনো ছবির দরকার নেই।

পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান

ই-পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান অনলাইনে সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্তি বাতায়ন ই-চালান ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে। এরপর সেটি পূরণ করে নিকটস্থ যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে জমা দেওয়া যাবে। তা ছাড়া ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান নিয়ে থাকে। চালান নেওয়ার পর ব্যাংক থেকে চালানের গ্রাহক কপিসহ একটি জমা রশিদ দেওয়া হবে।

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদনপত্র ও শিডিউল কপি

ই-পাসপোর্টআবেদন সম্পন্ন হলে একদম শেষে প্রিন্ট সামারি থেকে এক পৃষ্ঠার অনলাইন ই-পাসপোর্ট শিডিউল কপি পাওয়া যাবে। আর ডাউনলোড অ্যাপ্লিকেশন ফর্মে ক্লিক করলে ৩ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন কপি পাওয়া যাবে।

শিশুদের ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইন আবেদন পদ্ধতি শুরুতেই বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। অতঃপর ড্যাশবোর্ডের ওপরের মেন্যু থেকে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করে প্রথমে আবেদনকারীর জেলা ও থানা নির্বাচন করতে হবে। এর পরের ধাপেই ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার পালা। এ অংশে শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রের অনুরূপ তথ্য দিতে হবে। এখানে পেশার ক্ষেত্রে আদার্স তথা অন্যান্য নির্বাচন করাটা উপযুক্ত।

১৮ বছরের নিচে যে কোনো বয়সের শিশুর জন্য শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট নির্বাচন করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট আবেদনপত্র জমা

যাবতীয় নথিসহ আবেদনপত্রটি জমার জন্য চলে যেতে হবে থানার আওতাধীন পাসপোর্ট অফিসে। এ সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রগুলোর সঙ্গে সেগুলোর মূল কপিও সঙ্গে রাখতে হবে। শিশুর থ্রি-আর সাইজ ছবি আলাদা রাখতে হবে।

শিশুর ই-পাসপোর্টের নিয়ম

অনূর্ধ্ব ৬ বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নথিসহ আবেদনপত্র জমা নিয়েই ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হবে। কারণ ৬ বছরের কম বয়সীদের বায়োমেট্রিক নেওয়া হয় না।

থ্রি-আর ছবিটিকেই ই-পাসপোর্টে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ৬ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিকের জন্য সাক্ষাৎকারের শিডিউল দেওয়া হয়। বায়োমেট্রিক নেওয়ার পর পাসপোর্টডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হয়।

ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি

বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই ই-পাসপোর্টআবেদন ফি সমান। দেশের ভেতরে ই-পাসপোর্ট ফিয়ের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট থাকে। ৫ বছর মেয়াদি ৪৮
পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য নিয়মিত/সাধারণ ডেলিভারি ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা। এক্সপ্রেস সেবার জন্য ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও সুপার এক্সপ্রেস হলে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা দিতে হয়।

শিশুদের ই-পাসপোর্ট করতে কত দিন লাগে

নিয়মিত/সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ডেলিভারি স্লিপ হাতে পাওয়ার দিন থেকে ১৫ অথবা ২১ কার্যদিবস। এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে এই সময়টি কমে আসে ৭ অথবা ১০ কার্যদিবসে। আর সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট হাতে আসতে সময় লা গে মাত্র ২ কার্যদিবস। তবে এই সুপার এক্সপ্রেস সুবিধাটি শুধু আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে পাওয়া যায়।

পরিশেষে

সবশেষে বলতে হয় যে বর্তমানে অনলাইন পদ্ধতির কারণে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশুদের ই-পাসপোর্ট নিয়ম খুব সহজ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এখন ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কাগজপত্রের সত্যায়ন প্রয়োজন হয় না। যেহেতু তারা কোনো ধরনের শিক্ষাগত সার্টিফিকেট প্রাপ্তির আগেই এই সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে, তাই ভবিষ্যতেও তাদের পাসপোর্টবা জাতীয় পরিচয়পত্র জনিত কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ এসএসসি, এইচএসসি, টিন সার্টিফিকেট সব ক্ষেত্রে একই তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের কাজগুলোতে কোনো রকম ঝামেলা পোহাতে হবে না।

 

Comments

The Daily Star  | English

Army chief meets Khaleda Zia

Chief of Army Staff General Waker-uz-Zaman met BNP Chairperson Khaleda Zia tonight

1h ago