প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল পোশাক

পোশাকের জন্য প্রাণী হত্যা বহু বছর ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন প্রাণী হত্যা করে মানুষ তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে পোশাক তৈরি করে পরছে, ফ্যাশন করছে। তবে যুগের পরিবর্তনে পোশাকের জন্য প্রাণী হত্যা যেমন নিন্দনীয় হয়ে পড়েছে, তেমনি কৃত্রিম উপাদপানের ব্যবহার প্রাণীর প্রতি নির্ভরশীলতাও অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
ছবি: কনসিডারেট কনজিউমার

পোশাকের জন্য প্রাণী হত্যা বহু বছর ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন প্রাণী হত্যা করে মানুষ তাদের শরীরের অংশ দিয়ে পোশাক তৈরি করে পরছে, ফ্যাশন করছে। তবে যুগের পরিবর্তনে পোশাকের জন্য প্রাণী হত্যা যেমন নিন্দনীয় হয়ে পড়েছে, তেমনি কৃত্রিম উপাদানের ব্যবহার প্রাণীর প্রতি নির্ভরশীলতাও অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
 
এক সময় ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষভোজীদের জন্য প্রাণীর চামড়া ও পালকের পোশাক পরিধান করা বিশেষ সংকটের বিষয় ছিল। অর্থাৎ তারা খাবার তালিকা থেকে মাংস ও প্রাণীজ খাবার বাদ দিতে পারলেও জীবনযাপনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাণী থেকে তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হতো। তবে সিন্থেটিক বিকল্প পাওয়ার পর থেকে তাদের আর প্রাণীজ পণ্য ব্যবহার করতে হয় না। প্রাণী হত্যা করে বা প্রাণী থেকে তৈরি সেই বিশেষ পোশাকগুলোর বিকল্প নিয়েই এবারের আলোচনা।

ছবি: কনসিডারেট কনজিউমার

অ্যাংগোরা

অ্যাংগোরা মূলত একটি নরম ও তুলতুলে তন্তু। যা আসে আংকারায় অবস্থিত এক বিশেষ প্রকারের খোরগোশ থেকে। এই তন্তু ঘাম শুষে নিতে পারে এবং শরীরকে দীর্ঘ সময় উষ্ণ রাখে। টুপি, মোজা ও মাফলারসহ বিভিন্ন সোয়েটারে এই তন্তুর ব্যবহার দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। তবে এখন এই তন্তুর বিকল্প রয়েছে। সেলুলোজ ফাইবারের তৈরি টেনসেল ও লয়োসেল ফাইবার দিয়েও অ্যাঙ্গোরার মতোই পোশাক তৈরি সম্ভব। কৃত্তিমভাবে বানানো হয় বলে সেখানে পশুর ব্যবহার নেই।

ছবি: কনসিডারেট কনজিউমার

ডাউন

ডাউন মূলত প্রকৃতির এক বিশেষ বিষ্ময়কর উপাদান। বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের, বিশেষ করে শীতবস্ত্রের প্রধান উপাদান এটি। পাখির ত্বকের ছোট ছোট পশম যা ত্বকের কাছাকাছি থাকে। সেই পশম ব্যবহার করে বানানো হয় নানা ধরনের শীতের পোশাক, অভিজাত বালিশ ও কম্বলের মতো পণ্য। শীতপ্রধান দেশেই এইসব পণ্যের দেখা মেলে। তবে, এই তন্তুর বিকল্প এখন অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। সিনথেটিক ও পলিয়েস্টার দিয়েও এমন পশমি কাপড় বানানো সম্ভব। আর যদি কিনতেই হয় তবে অবশ্যই রেসপনসেবল ডাউন স্ট্যান্ডার্ড (আরডিএস) দেখে কিনতে হবে। 

এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান পাওয়া যায়। সূতি বা কটন, হেম্প বা শণ ও সিল্ক কাপড় ব্যবহার করা যায় ডাউন-এর পরিবর্তে।

ছবি: কনসিডারেট কনজিউমার

পালক

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পালকের তৈরি পোশাক। পোশাকটিতে যে পাখির পালক ব্যবহার করা হয় সেই পাখির চিহ্ন দিয়ে দিতে হয়। অর্থাৎ কোন প্রাণীর পশম ব্যবহার করা হয়েছে সেটির উল্লেখ থাকতে হয়।

একপ্রকার পশম আছে, যেটা বৈধতা পেয়েছে। সেটি হলো সড়কে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া প্রাণীদের পশম। পামেলা পাকুইন্স এবং বোস্টন হাইওয়ে ডিপার্টমেন্ট-এর সম্মিলিত উদ্যোগে তারা হাইওয়েতে দুর্ঘটনায় মারা হওয়া কোনো প্রাণীর চামড়া সংগ্রহ করে এবং বাকি অংশ অন্যান্য প্রাণীদের খাওয়ার জন্য রেখে দেয়। এরকম পশম ব্যবহার করা হলে সেখানে সিলভার কালারের ব্যাজ ব্যবহার করা হয়। সঙ্গে কোন রোডে প্রাণীটি মারা গিয়েছিল সেটির উল্লেখ থাকে। 

তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কৃত্তিমভাবে তৈরি করা ফক্স পশম ব্যবহার করা।

ছবি: কনসিডারেট কনজিউমার

চামড়া

ব্যাগ থেকে শুরু করে বেল্ট, জুতা সবকিছু তৈরিতেই ব্যবহার করা হয় চামড়া। চামড়ায় বানানো যেকোনো পণ্যই অনেক বেশি মজবুত হয়। অভিজাত অনুভূতির পাশাপাশি চামড়ার যেকোনো পণ্যই দিনকে দিন অধিক সুন্দর দেখাযায়। গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে সাপ ও কুমিরের চামড়া ব্যবহার করেও এখন এসব পণ্য তৈরি করা হয়ে থাকে। 

তবে বর্তমান সময়ে কেউ চাইলে এসব প্রাণীর চামড়া বাদ দিয়েও এসব পণ্য তৈরি করতে পারেন। তাতে পণ্যের মানের খুব বেশি তারতম্য হবে না। খালি চোখে পার্থক্য বের করা দুষ্করও বটে। ফেক লেদার, ফক্স লেদার, সিনথেটিক লেদারসহ আরও অনেক উপাদান আছে যা কৃত্তিমভাবেই চামড়ার অনূভুতি দেয়। 

কর্ক লেদার নামে একটি বিশেষ লেদার রয়েছে যা আসে গাছের কাঠ থেকে। সে ক্ষেত্রে কয়েক বছরেই সেই গাছ কেটে আবারও লাগানো সম্ভব। পাশাপাশি মাশরুম লেদার, পাইনআপেল লেদারের সঙ্গে আছে ল্যাবে তৈরি লেদার যা বানানো হয় কৃত্তিমভাবে। ল্যাবের ভেতর কোনো প্রাণীর কোষ ব্যবহার করে এসব লেদার কৃত্তিমভাবে বানানো সম্ভব। যদি প্রাণীর চামড়া ব্যবহার ছাড়াই পণ্যের মানের তারতম্য না হয় তাহলে প্রাণীর ব্যবহার কেন!

ছবি: কনসিডারেট কনজিউমার

উল 

ছাগল ও ভেড়ার লোম ছাটাই করাই উলের প্রধান উৎস। উলের তৈরি পোশাকের বিশেষত্ব হলো তা শীতের দিন উষ্ণ ও গরমের সময়ে শীতল অনুভূতি দেয়। অর্থাৎ তাপমাত্রা অনেক সময় ধরে রাখতে পারে এই উল।
 
উল কেনার আগে দেখেনিন সেটি কোনো নির্মমউপায়ে কোনো প্রাণী থেকে সংগ্রহ করা হয়ে কি না। অবশ্যই রেসপনসিবল উল প্রোডাকশন (আরডব্লিউএস) লোগো দেখে কিনুন।

আমাদের ফ্যাশনের জন্য যদি কোনো প্রাণীকে হত্যা করা হয়, তাহলে সেটাকে ফ্যাশন বলা যায় না। আর অন্য প্রাণীর পালক, চামড়া এমনকী অনেক সময় দাঁত ও অন্যান্য অংশও আমরা ব্যবহার করি। মানবতার দিক থেকে নীরবে আমরা নির্মম হয়ে যাচ্ছি। অধিক অর্থ ব্যয় করে আমরা সেসব পোশাক কিনছি যেটা আসলে নির্মমভাবে তৈরি করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে নেওয়ার সময় এসেছে। 
 

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

6h ago