যে পোশাক সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর
যদিও এ নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাই না, কিন্তু সমুদ্র সৈকতে ভুলভাল পোশাক পরে গেলে কিন্তু ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ঝামেলা ঘটতে থাকে। খুব আয়েশি ট্যুরটাও ভোগান্তির মনে হতে পারে। ধরুন, দাবদাহে ঠান্ডা পানিতে একটা ডুব দিয়ে আসতে গেলেন, কিন্তু পরে আছেন জিন্সের প্যান্ট।
প্রত্যাশিত শীতলতা তো ত্বকে পাবেনই না, সেইসঙ্গে নোনতা পানি জিন্সের মধ্যে স্পঞ্জের মতো ঢুকে গিয়ে এক বিচ্ছিরি অস্বস্তিতে ফেলবে। এর বিপরীত যে পোশাকটা বেছে নেওয়া দরকার, তা অবশ্যই আরাম, ফ্যাশন ও সমুদ্রের নির্যাসে পরিপূর্ণ হবে।
'ক্যাজুয়াল' কিন্তু স্টাইলিশ কিছু বেছে নিতে হলে রয়েছে ক্রপশার্ট ও পালাজ্জো প্যান্ট। দেহের মাপের সঙ্গে মানানসই ক্রপ টপ আর ফুলে থাকা পালাজ্জো ট্রাউজার কোনোরকম চেষ্টা ছাড়াই আরামদায়ক আর সুন্দর একটা ভাব এনে দেয়, যা সৈকতের ধার ধরে অলস হেঁটে বেড়ানো, দেরিতে ঘুম থেকে সমুদ্রের সামনে বসে সেরে নেয়া 'ব্রাঞ্চ' বা বারবিকিউ ডিনারের জন্য দারুণ উপযোগী।
আর রঙের কথা ভাবতে গেলে উজ্জ্বল হলুদ, কমলা, গোলাপি ইত্যাদি রঙের বেছে নিতে পারেন। সঙ্গে থাকতে পারে নীল, জলপাই বা কালো রঙের পালাজ্জো। অথবা চাইলে সমুদ্র আর আকাশের সঙ্গে মিল রেখে নিচের অংশে সমুদ্র-নীল রং আর ওপরে সেই 'ক্লাসিক' সাদা টপ পরতে পারেন।
একই পদ্ধতি খাটানো যায় ক্রপ টপের সঙ্গে র্যাপ স্কার্ট পরে। পোশাকটি সাজসজ্জায় অনন্য মাত্রা যোগ করে এবং সমুদ্র সৈকতের আবহের সঙ্গে সহজ একটা সৌন্দর্য এনে দেয়।
এই অ্যাডজাস্টেবল র্যাপ স্কার্ট একইসঙ্গে আরামদায়কও, সঙ্গে আবার এর রঙের কারুকাজে একটা দুষ্টু মিষ্টি ভাব চলে আসে। আরেকটু বাড়তি কিছু যোগ করতে চাইলে এই পোশাকের সঙ্গে একটা লম্বা ঘেরের সূর্যটুপিও মাথায় চড়িয়ে নিতে পারেন।
একটু সাবেকি কায়দায় চলতে পছন্দ করলে, মনের মধ্যে 'রেট্রো ভাইব' থাকলে সৈকতের পোশাক হিসেবে বেছে নিতে পারেন জাম্পস্যুট। লম্বা ঘেরের একটু 'ফ্লোয়ি' ভাব আছে এমন একটা শ্রাগ সঙ্গে নিয়ে নিলে 'অল ইন ওয়ান' ধরনের একটা পোশাক হতে পারে, যা একইসঙ্গে ফ্যাশনেবল এবং বহুমাত্রিক, সমুদ্র সৈকতের সঙ্গেও ভীষণ মানানসই।
গাঢ় রঙের সিল্ক বা ডাবল জর্জেট কাপড়ের তৈরি পোশাক বা একটু মজার কারুকাজ আছে এমন জামাকাপড় বেছে নিলে দুনিয়ার চিন্তা ছাড়াই সমুদ্রের আনন্দ নেওয়া সহজ হয়। অন্যদিকে এই শ্রাগে সাঁতার কেটে আসার পরের সুরক্ষা বাদেও সাজসজ্জায় এক ধরনের আবেদন যোগ হবে।
সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে মিল আছে এমন হেডব্যান্ড, নেকলেস বা ছোট্ট এক জোড়া ইয়ারস্টাড পরলে 'ক্লাসি অ্যান্ড স্যাসি' সমন্বয়ের নির্ভুল প্রকাশ ঘটবে পরিচ্ছদে।
ধ্রুপদী সৈকত-পোশাকের কথা এলে হাঁটু পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের গ্রীষ্মকালীন পোশাকের কথা ভোলা যায় না। সুতি বা লিনেনের মতো আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি হালকা পোশাকে গাঢ় নকশা ও রঙের বেপরোয়া মিশেল সৌন্দর্যের সব সংজ্ঞাকেই ছাড়িয়ে যায়। ঢিলেঢালা, হাঁটুর নিচে থাকা কাটা অংশের জন্য খুব সহজে চলাফেরা করা যায়। চাইলেই ছাতার নিচে প্রিয় বই পড়া যায় কিংবা সৈকতে বসে গড়া যায় বালুর রাজপ্রাসাদ।
সৈকতে ঘুরে বেড়ানো বোহেমিয়ান ভাব আনতে টাই-ডাই প্রিন্ট যেকোনো সময়ই ভালো পছন্দ। জামা হোক, স্কার্ট বা টু-পিস সেট কিংবা জাম্পস্যুট, টাই-ডাই পোশাকে থাকা রেট্রো আমেজের কারণে সাজসজ্জায় যেন লাগে এক শৈল্পিক ছোঁয়া।
বোহো ভাবের জন্য কেউ চাইলে টাই-ডাই ম্যাক্সি ড্রেস বা লম্বা ঘেরের স্কার্টের সঙ্গে একরঙা ক্রপ টপ পরতে পারেন। সমুদ্রের মতো পোশাকে থাকা এই রঙিন ঢেউগুলো চলাফেরায়ও রোমাঞ্চ বয়ে আনবে। এই পোশাকের সঙ্গে চাইলে পুঁতির ব্রেসলেট, ঢিলেঢালা সূর্যটুপি আর ঝালরওয়ালা ব্যাগ নেওয়া যায়।
সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার আগে পোশাকের বিষয়ে একটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখা দরকার, যে যাই পরুন না কেন, আরামদায়ক হতে হবে। দিনশেষে আনন্দ করাটাই মূলকথা। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলুন, সূর্য-বালি আর ঢেউয়ের ভিড়ে নিজস্ব শৈলীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠুন।
মডেল: আনুশকা চাকমা, সমুদ্র চাকমা, সুমেধা চাকমা
পোশাক: তেনজিং চাকমার সৌজন্যে
অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments