পোশাকের লেবেলের কোনটার কী অর্থ
আপনি যে পোশাক পরেন, খেয়াল করলে দেখবেন প্রতিটি পোশাকেই এক বা একাধিক লেবেল ও ট্যাগ রয়েছে। এসব ট্যাগে আবার নানা ধরনের প্রতীক থাকে। যেমন, ব্র্যান্ডের নাম, কাপড়টি কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কাপড় বা সুতার ধরন, কাপড়টি কী দিয়ে তৈরি, পোশাকের আকার, উৎপাদনকারী দেশ ইত্যাদি নির্দেশ করা থাকে।
একটি পোশাক সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখার জন্য কাপড়ের লেবেলের চিহ্নগুলোর অর্থ বুঝতে পারা জরুরি।
মোটাদাগে বলতে গেলে ২ ধরনের লেবেল রয়েছে। মেইন লেবেল ও সাব লেবেল।
এর মধ্যে মেইন লেবেলে পোশাকটির ব্র্যান্ডের নাম বা লোগো যেমন, জ্যাক অ্যান্ড জোনস, আমেরিকান ঈগল ও গুচি এ জাতীয় ব্র্যান্ডের নাম থাকে।
অন্যদিকে, বেশ কিছু লেবেলের সমষ্টি হচ্ছে সাব লেবেল। সাব লেবেলের মধ্যে রয়েছে- কেয়ার লেবেল, কম্পোজিশন লেবেল, স্পেশাল লেবেল, সাইজ লেবেল, প্রাইস লেবেল, ফ্ল্যাগ লেবেল ইত্যাদি।
বিভিন্ন ধরনের লেবেলের মধ্যে কেয়ার লেবেলটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যদি আপনি আপনার কাপড়কে দীর্ঘদিন নতুনের মতো রাখতে চান, তাহলে এ সম্পর্কে ধারনা রাখা জরুরি।
কেয়ার লেবেল
কীভাবে পোশাকটির যত্ন বা পরিচর্যা করবেন তার নির্দেশনা থাকে এই লেবেলে। পোশাকের জন্য ওয়াশিং, ব্লিচিং, ড্রাইং, লন্ড্রি ও ইস্ত্রি ইত্যাদি কোনটি কীভাবে করবেন তার নির্দেশনা থাকে এই লেবেলে। আর নির্দেশিত উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণ করলে পোশাক থাকবে নতুনের মতো এবং হবে দীর্ঘস্থায়ী।
ওয়াশিং
একটি পূর্ণ পানির বালতির চিহ্ন থাকলে বুঝবেন আপনি জিনিসটি পানিতে ভিজিয়ে ধুতে পারবেন। কিন্তু, 'ক্রস' মার্ক দিয়ে চিহ্নিত বালতির ক্ষেত্রে জিনিসটি পানিতে ভিজিয়ে ধোয়া যাবে না।
যদি পোশাকটি মেশিনে ধোয়া যায়, তাহলে আপনি বালতির চিহ্নের ভেতরে বিন্দু বা তাপমাত্রার সংখ্যা দেখতে পাবেন। এর মাধ্যমে নির্দেশ করা হয় আপনি আপনার পোশাকটি সর্বোচ্চ কত তাপমাত্রায় ধুতে পারবেন। একটি বিন্দুর মানে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অর্থাৎ আপনাকে পোশাকটি মোটামটি ঠান্ডা পানিতে ধুতে হবে। দুটি বিন্দু মনে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ উষ্ণ পানি, ৩টি বিন্দু ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এভাবে প্রতি একটি বিন্দুর জন্যে ১০ ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বাড়ানো যাবে। তবে ৬টি বিন্দু মনে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার অর্থ এই তাপমাত্রায় আপনি পোশাকটির কোনো ক্ষতি না করে পরিষ্কার করতে পারবেন।
বালতির নিচে যদি একটি লাইন টানা থাকে তবে এর অর্থ হলো আপনার পোশাকটি মেশিনের সিন্থেটিক সাইকেলে ধোয়া উচিত। আর দুটি লাইনের অর্থ জেন্টাল বা উল ওয়াশ সাইকেলে ধোয়া উচিত। বালতির নিচের লাইনগুলো মূলত আপনাকে ওয়াশিং মেশিনে কী পরিমাণ কাপড় রাখতে হবে এবং আপনি মেশিনে কোন ধরনের স্পিন ব্যবহার করবেন তা নির্দেশ করে। বেশি লাইন মানে কম কাপড় এবং কম স্পিন ব্যবহার বোঝায়।
কেয়ার লেবেলে হাত দিয়ে পরিষ্কারের প্রতীক থাকলে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম তাপমাত্রায় হাত দিয়ে ধুয়ে ফেলুন বা আপনার ওয়াশিং মেশিনের হ্যান্ড ওয়াশ প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন।
'ডু নট রিঙ' চিহ্নের মাধ্যমে বোঝানো হয় কাপড়টি মুচড়িয়ে নিংড়ানো যাবে না।
ব্লিচিং
ত্রিভুজ দিয়ে ক্লোরিন বা ব্লিচ জাতীয় পণ্যগুলোর ব্যবহারকে বোঝায়।
একটি খালি ত্রিভুজ বা যেটিতে ক্লোরিনের (সিএল) চিহ্ন রয়েছে, সেই পোশাকে আপনি যেকোনো ধরনের ব্লিচ ব্যবহার করতে পারবেন। আর যদি ত্রিভুজটিতে ক্রস চিহ্ন থাকে, তাহলে আপনি সেটিতে কোনো ধরনের ব্লিচ ব্যবহার করতে পারবেন না। সমান্তরাল রেখাসহ ত্রিভুজের অর্থ যে কোনো নন ক্লোরিন বা অক্সিজেনভিত্তিক ব্লিচ ব্যবহার করতে পারবেন।
ড্রাইং
পোশাকের আকৃতি ঠিক রাখতে এবং সংকোচন রোধে একে শুকানোর সঠিক প্রক্রিয়া জানা উচিত। লেবেলে বর্গক্ষেত্র ও বৃত্তের মাধ্যমে দেখানো হয় কীভাবে তা করতে হবে। এখানে বর্গক্ষেত্রের ভেতরের বৃত্তটি দ্বারা স্বয়ংক্রিয় ড্রায়ার মেশিনকে বোঝায়।
একটি সাদা বৃত্তসহ বর্গ থাকলে বোঝায় আপনি সাধারণ তাপমাত্রায় টাম্বল ড্রাই করতে পারেন। যেখানে বৃত্তের মধ্যে বিন্দু থাকলে সেগুলো তাপমাত্রা নির্দেশ করে। এক বিন্দুসহ একটি বৃত্ত থাকলে কম তাপমাত্রায় ড্রায়ার ব্যবহার করুন। দুটি থাকলে মাঝারি তাপমাত্রায় এবং ৩টি থাকলে উচ্চ তাপমাত্রায় ড্রায়ার ব্যবহার করুন। সম্পূর্ণরূপে কালো বৃত্ত বা একটি বর্গাকার বৃত্ত ক্রস চিহ্ন থাকলে ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারবেন না। বর্গ ও বৃত্তের নিচে একটি লাইন থাকলে ড্রায়ারে নরম ও দুর্বল কাপড়ের প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন। আর দুটি লাইন থাকলে কম তাপমাত্রায় ড্রায়ারের ডেলিকেট প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন। বর্গক্ষেত্রে ৩টি উল্লম্ব রেখা মানে ড্রিপ ড্রাই করা। আর একটি অনুভূমিক রেখা মানে সমতল কোথাও রেখে শুকানো। ভেতরে একটি বাঁকা রেখাসহ বর্গক্ষেত্র থাকলে বাতাসে সাধারণভাবে ঝুলিয়ে শুকনো বোঝায়।
ইস্ত্রি
সব ধরনের কাপড় একইভাবে বা একই তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করা হয় না।
একটি বিন্দুসহ ইস্ত্রির চিহ্ন থাকলে বোঝায় আপনি কম তাপমাত্রায় পোশাকটি ইস্ত্রি করতে পারবেন। দুটি বিন্দুর ক্ষেত্রে মাঝারি তাপমাত্রায় এবং ৩টি বিন্দুর জন্যে আপনি উচ্চ তাপমাত্রায় পোশাকটি আয়রন করতে পারেন। আর যদি ইস্ত্রির চিহ্নটি ফাঁকা অর্থাৎ কোনো বিন্দু না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি যেকোনো তাপমাত্রায় সেটি ইস্ত্রি করতে পারেন। ইস্ত্রির চিহ্নটি যদি ক্রস থাকে তাহলে পোশাক ইস্ত্রি করা যাবে না। আর 'স্টিম লাইন' ক্রস করা থাকলে ইস্ত্রির স্টিমিং ব্যবহার করা যাবে না।
এ ছাড়া কিছু চিহ্ন রয়েছে যেমন, কতকগুলো একক বৃত্ত থাকলে বুঝতে হবে পোশাকটির ড্রাই ক্লিনিং বা প্রফেশনাল ক্লিনারের প্রয়োজন। আবার একটি ক্রস বৃত্ত থাকলে সেটি ড্রাই ক্লিনিং করা যাবে না, সাধারণভাবে ধুতে হবে।
এসব চিহ্ন, আপনার কাপড়টি ড্রাই ক্লিন করা উচিত কি না এবং একজন ড্রাই-ক্লিনার কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করবেন তা বলে দেয়।
কম্পোজিশন এবং স্পেশাল লেবেল
পোশাকটি কোন ধরনের উপাদান দ্বারা গঠিত বা উপাদানের মিশ্রণ কত শতাংশ করে আছে তা নির্দেশ করে কম্পোজিশন লেবেল। অর্থাৎ, পোশাকটির গঠন উপাদান যেমন, কটন, কটন রেগুলার, ডেনিম, সাব ডেনিম ইত্যাদি নির্দেশ করে।
অন্যদিকে, কাপড়টির কত শতাংশ কী রয়েছে যেমন: ৮০ শতাংশ তুলা, ৫ শতাংশ স্প্যানডেক্স কিংবা ১০০ শতাংশ তুলা ইত্যাদি নির্দেশ করে।
আবার কখনো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পোশাকগুলোতে স্পেশাল লেবেল ব্যবহার করা হয়। যেমন: ১০০ শতাংশ সিল্ক, ১০০ শতাংশ তুলা, ১০০ শতাংশ চামড়া ইত্যাদি।
সাইজ, প্রাইস এবং ফ্ল্যাগ লেবেল
সাইজ লেবেলে পোশাকের আকার দেওয়া থাকে। যেমন: এস, এম, এল ও এক্সএল ইত্যাদি।
এ ছাড়া প্রাইস লেবেলে পোশাকের দাম উল্লেখ থাকে।
অন্যদিকে ফ্ল্যাগ লেবেল একটি ছোটো লেবেল যেখানে ব্র্যান্ডের নাম বা লোগো দেওয়া থাকে। যেগুলো সাধারণত কাপড়ের নিচের দিকে একপাশে সেলাইয়ের মধ্যে থাকে।
তথ্য সূত্র:
গার্মেন্টসমার্চেন্টাইজিং.কম, এরিয়াল.কম ও জেফ.কম
Comments