কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণে শ্রম মন্ত্রণালয়-আইএলওর পাইলট প্রকল্প
বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন একটি প্রকল্প শুরু করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
আজ বুধবার আইএলওর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নেদারল্যান্ড ও জার্মানি সরকার এই প্রকল্পে সহযোগিতা করবে।
আইএলও এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যৌথভাবে 'এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম' (ইআইএস) প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে আজ।
এর সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিআইনেন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জার্মানি, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এনসিসিডব্লিউই, শ্রমিক সমিতি, উন্নয়ন সহযোগী ও অন্যান্য জাতীয় স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধিরা।
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতেও একই সুবিধা দেওয়া হবে।
শ্রমিকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৩ সাল থেকে আইএলও ও জিআইজেড বাংলাদেশের সরকার ও ইন্ডাস্ট্রি পার্টনারদের সঙ্গে কাজ করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, তৈরি পোশাক শিল্পের কোনো কর্মী কাজ করার সময় আহত, নিহত বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তাকে বা তার পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে মাসিক ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, 'বাংলাদেশের সরকার দেশের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা সচেষ্ট এবং এই প্রকল্পটি তারই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।'
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিআইনেন বলেন, 'দেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের দুর্ঘটনা জনিত নিরাপত্তা মজবুত করতে এই ইআইএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার, মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে কাজ করে একটি আধুনিক ও সমসাময়িক ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরে আইএলও ভীষণ আনন্দিত।'
শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসান-এ-এলাহী আইএলওকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'এই দিনটি সামাজিক সুরক্ষা খাতে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করতে চলেছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এই পাইলট প্রোগ্রামটি "আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ড" অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে এবং এর সফলতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।'
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, 'দেশের তৈরি পোশাক শিল্প টেকসই ও নিরাপত্তা খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধন করেছে, বিশেষ করে শ্রমিক কল্যাণ ও শিল্প সংযোগের ক্ষেত্রে। ইআইএস শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং বিশেষ করে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আমরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এমন আরও উদ্যোগে অংশগ্রহণে আগ্রহী।'
এনসিসিডব্লিউই সভাপতি শামীম আরা বলেন, 'এই উদ্যোগের ফলে শ্রমিকরা দুর্ঘটনা পরবর্তী জীবনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারবেন। এটি একদিকে যেমন শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে কর্মস্থলকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে।'
ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ব্যাস ব্লাও বলেন, 'বাংলাদেশে ইআইএস পাইলট প্রোগ্রাম চালুতে পাশে থাকতে পেরে নেদারল্যান্ডস অত্যন্ত আনন্দিত। যেহেতু, এই খাতে প্রতিযোগিতা ও সামাজিক নিরাপত্তা একত্রে চলে, তাই এই প্রোগ্রামটি সর্ব ক্ষেত্রেই লাভজনক হতে পারে।'
ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন প্রধান জোহানেস স্নাইডার বলেন, 'বাংলাদেশের এই সংস্কার প্রক্রিয়ার শীর্ষে থাকবে ইআইএস পাইলট প্রোগ্রাম। কারণ, এর ফলে আমাদের কাছে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি স্কিম রয়েছে, যা কর্মস্থলে দুর্ঘটনা ও দারিদ্র থেকে শ্রমিকদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবে।'
সামাজিক সুরক্ষার ৯টি শাখার মধ্যে একটি হলো কর্মস্থলে দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা, যা আইএলও-এর সামাজিক নিরাপত্তা (ন্যূনতম মান) কনভেনশন, ১৯৫২ (নং ১০২)-এর অধীনে সকল শ্রমিকের জন্য স্বীকৃত। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শিল্প-বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পাশাপাশি দুর্ঘটনার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ জন্য দুর্ঘটনা রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি কর্মস্থলে দুর্ঘটনা কবলিতদের জন্য একটি উন্নত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার ও আইএলও কাজ করে যাচ্ছে।
Comments