দাম বাড়লেও শঙ্কায় দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা
সরকার আসন্ন কোরবানিতে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭ টাকা আর ছাগলের চামড়া ৩ টাকা বাড়ালেও মনে আনন্দ নেই দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীদের। গত কয়েক বছর ধরে সরকার নির্ধারিত দাম না পাওয়ায় এবারও এ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন।
সঠিক দাম ও বকেয়া টাকা না পেয়ে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা ছেড়েছেন দিনাজপুরের অন্তত অর্ধ শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী। সেই কারণে এক সময়ের জমজমাট পশুর চামড়ার বাজার এখন প্রায় সারা বছরই থাকে লোকশূন্য।
কোরবানিকে ঘিরে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হলেও ব্যবসায়ীদের কাছে যথেষ্ট পুঁজি না থাকায় গত কয়েক বছর ব্যবসা নেই বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির তথ্য মতে, দেশের উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগর। এই বাজারে আগে সারা বছর দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী থেকে আসা প্রায় ৭০-৭৫ হাজার গরু ও ৪০-৫০ হাজার ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হতো। শুধু কোরবানির সময় এই বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার গরু ও ২৫-৩০ হাজার পিস ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এ বছর রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এবার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট বাড়ানো হয়েছে ৭ টাকা এবং খাসির চামড়া বাড়ানো হয়েছে ৩ টাকা।
দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সরকার দাম নির্ধারণ করলেও তারা এই দাম কোনো দিনই পান না। ট্যানারি মালিকদের ইচ্ছামতো দামেই তাদেরকে চামড়া বিক্রি করতে হয়।
দিনাজপুরের রামনগর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছিল তার চেয়ে প্রতি বর্গফুটে ১০ টাকা কমে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে দাম নির্ধারণ করেন। বাধ্য হয়ে সেই দামেই চামড়া বিক্রি করতে হয়। তাই সরকার দাম বাড়ালেও আমাদের কোনো লাভ নেই।'
তিনি জানান, দিনাজপুরে গত কয়েক বছরে চামড়ার ব্যবসায় ধস নেমেছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকায় অনেকেই পথে বসেছেন। আবার অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। দিনাজপুরে ১৫৫ চামড়া ব্যবসায়ীর মধ্যে এখন ব্যবসা করছেন মাত্র ১৫ জন।
তার দাবি, 'গত কয়েক বছরে ট্যানারি মালিকদের কাছে দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনার ৩০ শতাংশ পাওয়া গেছে। বাকিটা মওকুফ করার কথা বলা হয়েছে। বাধ্য হয়েই মোট পাওনার ৩০ শতাংশ টাকা নিয়ে ফিরে আসতে হয়। এ জন্য অনেকেই চামড়া ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।'
'ঢাকার ট্যানারি মালিক ও নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে ২০১১ সাল থেকে দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া ২০ কোটি টাকার বেশি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ীরা ওই টাকার মাত্র ৩০ শতাংশ পেয়েছেন।'
রামনগর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতার আজিজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্যানারি মালিকদের কাছে আমার বকেয়া প্রায় দেড় কোটি টাকা। টাকা না পেয়ে পুঁজি হারিয়ে গত বছর ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। আমার মতো অনেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকেই পথে বসেছেন।'
'দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা গত ৩ মাসের সরবরাহকৃত চামড়ার দাম পাননি' উল্লেখ করে রামনগর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংক চলবে। এই ৩ মাসের বকেয়া আদায়ের চেষ্টা করছি। টাকা না পেলে চামড়া কিনতে হিমসিম খেতে হবে। এ নিয়ে দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় আছেন।'
Comments