অবৈধ ক্লিনিকবিরোধী অভিযানে বেরিয়ে আসছে স্বাস্থ্য খাতের পচন

বাংলাদেশে বেআইনিভাবে পরিচালিত কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যে অনাচার চলছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে এগুলো সম্পর্কে কিছু তিক্ত সত্য প্রকাশিত হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতাকে কোনো ধরনের বিবেচনায় না নিয়েই এসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এমন ঘটনাই দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে। অনিবন্ধিত হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে আসছেন—এমন তথ্য শুনে এক প্রসূতি মা ও নবজাতককে অস্ত্রোপচার টেবিলে রেখেই পালিয়ে যান হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য কর্মীরা। ওই হাসপাতালে আরও ৩ রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এর আগের দিন তাদের সি-সেকশন সার্জারি করা হয় এবং নবজাতকদের রাখা হয় সাধারণ বিছানা ও কেবিনে।

কীভাবে একটি হাসপাতাল রোগীদের এভাবে বিপদের মধ্যে ফেলতে পারে? হাসপাতালগুলো বেআইনিভাবে পরিচালিত হচ্ছে, শুধু এই বক্তব্য দিয়ে এই অবস্থাকে ব্যাখ্যা করা যায় না। বরং আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার গভীরে রয়েছে নোংরা পচন। তা না হলে যারা এগুলো পরিচালনা করেন, রোগীদের জীবন তাদের নিজেদের স্বার্থের কাছে কীভাবে গৌণ হয়ে যায়?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৯ মে পর্যন্ত সারা দেশে ৮৮০টির বেশি অননুমোদিত প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছে। আইন প্রয়োগে শিথিলতা ও সরকারি ব্যবস্থাপনার ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে, তাও প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২টি দেশের দূতাবাসের সঙ্গে চুক্তি করা একটি ক্লিনিকের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেটি ওই ২ দেশে ভ্রমণেচ্ছুদের শারীরিক পরীক্ষা করে মূল্যায়নপত্র দেবে। অথচ লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতালের তালিকায় বা লাইসেন্সের অপেক্ষায় থাকা আবেদনকারীর তালিকায় ওই ক্লিনিকের নাম পাওয়া যায়নি।

করোনা মহামারি চলাকালে বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লাইসেন্সের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লাইসেন্সবিহীন এমন হাসপাতালের সঙ্গে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিজেই বিতর্কিত হয়েছিল।

বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা প্রণয়নে অধিদপ্তরের যেমন খামখেয়ালিপনা দেখা যায়, তেমনি হুট করে মাঝে-মধ্যে এমন অভিযানও চালাতে দেখা যায়।

কিন্তু, এ ধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠান যেন গড়ে ওঠতে না পারে তার জন্য দৃঢ় অবস্থান নেওয়া কিংবা অভিযানের পর আবার স্তিমিত হয়ে যাওয়া পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ আসবে, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয় না।

এর মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় না, যা হয় তা হলো লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা। আমরা সরকারের এ ধরনের উদ্যোগের খারাপ ফলও দেখেছি। এ অবস্থায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতালগুলো রোগীদের কাছ থেকে শুধু অতিরিক্ত ফি আদায় করেই ক্ষান্ত হয় না, তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানিও করে।

তবুও আমরা আনন্দিত যে সরকার অবশেষে লাইসেন্সবিহীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় আকারের অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মাধ্যমে এগুলোর সংখ্যার ও অবস্থার পরিষ্কার চিত্র উঠে আসবে। কিন্তু, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিতভাবে এগুলো তদারকির অনুরোধ জানাই, যেন আইন লঙ্ঘন করা প্রতিষ্ঠানের বা স্বাস্থ্যকর্মীর সেবাপ্রদান বন্ধ বা লাইসেন্স বাতিল করা যায়। একইসঙ্গে অনিবন্ধিত চিকিৎসকদেরও চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।

পাশাপাশি নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকেও পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত যেন সেগুলো সবসময় মানসম্পন্নভাবে পরিচালিত হয়।

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate allegations of corruption, irregularities, and criminal activities in the three national elections held in 2014, 2018, and 2024.

8h ago