বৈষম্য নিরসন ও পদোন্নতিসহ ৪ দাবি শিশু বিশেষজ্ঞদের
বৈষম্য নিরসন, পদোন্নতিসহ ৪ দাবিতে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের অফিসের সামনে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরা।
আজ রোজ বুধবার সকালে বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) ব্যানারে বিসিএস পেডিয়াট্রিকস বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক এতে অংশ নেন।
বিপিএর আহ্বায়ক অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ ও সদস্যসচিব মো. বেলায়েত হোসেন ঢালীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানববন্ধনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত অবহেলিত শিশু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে গাইনি বিশেষজ্ঞরাও উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পদায়নের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের পদোন্নতি জট নিরসনের দাবিতে শিশু বিশেষজ্ঞরা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানান। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে শিশু বিভাগের ক্যাডারের বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন এবং এ সংকট নিরসনের সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
চিকিৎসকরা বলেন, শিশু বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অবদানের পরও তারা চাকরি ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। দিন দিন শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে সে তুলনায় পর্যাপ্ত পদ সৃষ্টি করা হয়নি। অপর্যাপ্ত পদ, অনিয়মিত ও ত্রুটিপূর্ণ পদোন্নতির কারণে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরা কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি পাচ্ছেন না।
উদাহরণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, ২০তম বিসিএসের শিশু বিশেষজ্ঞ এখনো ষষ্ঠ গ্রেডের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত, যেখানে কোনো কোনো বিষয়ে একই বিসিএসের কর্মকর্তারা অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। প্রশাসন ক্যাডারে ২০তম বিসিএসের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম-সচিব পদে কর্মরত। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক ১০-১৫ বছর চাকরি করেও এখনো মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত আছেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা দাবিগুলো হলো:
১. পদোন্নতি: বিসিএসের ব্যাচভিত্তিক জুনিয়র কনসালট্যান্ট, সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে দ্রুত পদোন্নতি। যোগ্য সবাইকে বিসিএসের সিনিয়রিটি অনুসারে অনতিবিলম্বে কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি।
২. পদায়ন: প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পদোন্নতিপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকদের ওএসডি হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে বা ইন-সিটু পদায়ন করা।
৩. পদ সৃষ্টি: স্বল্পতম সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত নতুন পদ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির পক্ষ থেকে পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
৪. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিকস: অন্যান্য ইনস্টিটিউটের মতো ঢাকায় একটি সরকারি 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিকস' স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন ও তাদের সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে দুপুর আড়াইটায় চিকিৎসকরা কর্মসূচি শেষ করেন।
পরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বিপিএ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। চিকিৎসকদের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তরের জন্য সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন।
Comments